চকরিয়ায় মা-মেয়েকে রশি বেঁধে ঘোরানোর ছবি ভাইরাল

0 ৫০

আলোকিত লংগদু ডেক্সঃ

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাংয়ে একটি গরুর বাছুর চুরি করে সিএনজি অটোরিক্সায় তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা কর্তৃক ধাওয়া দিয়ে ধরার পর তিন নারীসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। তবে এ সময় দুই নারীর কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে ঘোরানোর একটি চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে শনিবার রাত থেকে।

এ ঘটনায় গরুর মালিক ইউনিয়নের বৃন্দানবনখিলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল হক বাদী হয়ে থানায় মামলা রুজু করলে পুলিশ ধৃত ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে। গত শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালে এই গরু চুরির ঘটনা ঘটে এবং সিএনজিতে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে। এ সময় পুলিশ ধৃতদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করে চোরাইকৃত গরু, স্প্রের বোতল, ছোরা, স্কচটেপ, মোবাইল, গাড়ির চাবি।

তবে চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, গরু চুরির ঘটনা যেমন অপরাধ, তেমন আইনের দৃষ্টিতেও গর্হিত অপরাধ নারীর প্রতি অমানবিকতা। তাই অতি উৎসাহী কারা নারীদের ওপর এমন গর্হিত কাজ করেছে, শণাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গরু চোরদের আটক করে স্থানীয় অতি উৎসাহী জনতা কর্তৃক পেটানো এবং রশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে হাটানোর খবর পাওয়ার পর হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মিরানুল হক গ্রাম্য চৌকিদার পাঠিয়ে জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করে পরিষদে নিয়ে আসেন। এরপর হারবাং ফাঁড়ির পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। পিটুনিতে আহত পাঁচজনকেই পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান।

এরপর গরুর মালিক তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু করলে পুলিশ সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। এ সময় আদালত তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। সিএনজি অটোতে তুলে নিয়ে যাওয়া গরুর বাছুরের মালিক হারবাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বৃন্দাবনখিল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মাহবুবুল হক। তিনি বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করেন।

জনতা কর্তৃক ধৃত হওয়ার পর পুলিশের কাছে সোপর্দকৃত গরু চোরের মামলার আসামীরা হলেন, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ছুট্টু (২৭), চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিরহাট এলাকার শহীদের কলোনীর মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার (৪০), ছেলে মো. এমরান (২১), মেয়ে সেলিনা আক্তার সেলি (২৮) ও রোজি আক্তার (২৩)। তবে এ সময় অজ্ঞাত সিএনজি অটোরিক্সা চালক পালিয়ে যায়। প্রথমজন ছাড়া তিন নারী ও দুই পুরুষ একই পরিবারের সদস্য।

স্থানীয়রা জানান, অতি উৎসাহী জনতা কর্র্তৃক দুই নারী মা-মেয়েকে কোমরে রঁশি বেঁধে প্রকাশ্যে হাটিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার সাথে স্থানীয় হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানকে জড়িয়ে বেশ অপপ্রচার চলছে।

এ প্রসঙ্গে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম দাবি করেছেন, যখন গরু চুরির ঘটনা ঘটে তখন তিনি ছিলেন ব্যক্তিগত কাজে চট্টগ্রামের কলাউজানে। অবশ্য ঘটনার খবর পেয়ে গ্রাম্য চৌকিদার পাঠিয়ে জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। এর পর পরিষদ থেকে মাত্র ২০ গজের মধ্যে থাকা হারবাং ফাঁড়ির পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকেও এই ঘটনার সাথে জড়িয়ে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে অসৎ উদ্দেশ্যে।’

হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পারসিত চাকমা বলেন, ‘খবর পেয়ে তিন নারী ও দুই পুরুষকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে জব্দ করা হয় একটি স্প্রে’র বোতল, বাট ছাড়া একটি ছোরা, একটি কালো স্কচটেপ, একটি মোবাইল ও গাড়ির চাবি।’

ভাইরাল হওয়া একটি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার শিকার নারী পারভীন ও এক পুরুষ সদস্য স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, পাবলিকই তাদেরকে পিটিয়েছেন এবং কোমরে রঁশি দিয়ে বেঁধে এলাকায় ঘুরিয়েছেন।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গরুর বাছুর চুরি করে সিএনজি অটোয় তুলে পালানোর ঘটনা স্বীকার করেছেন। গরু চুরির বিষয়টি যেমন অপরাধ, তেমনি কাউকে এভাবে রঁশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে ঘোরানোটাও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। তাই অতি উৎসাহী কারা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন, ফুটেজ দেখে তাদেরকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগীদের পক্ষে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আপনার ইমেইল প্রদর্শন করা হবে না।