স্মৃতিময় হৃদয়ের বঙ্গবন্ধু

0 ১৫০

আলোকিত লংগদু ডেক্সঃ

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা লিখতে কোত্থেকে আরম্ভ করব ভেবে পাচ্ছি না। তা কি প্রথম দেখার দিন থেকে, না প্রথম সাক্ষাতের দিন থেকে? তবে এই দুটি দিনের তেমন কোনো গুরুত্ব ছিল না। তাঁকে প্রথম সামনাসামনি দেখি আজ থেকে ৫৮ বছর আগে ১৯৬২ সালে। ওই সময়ে ঢাকা প্রেসক্লাবে কচি–কাঁচার মেলার উদ্যোগে যে ‘আনন্দমেলা’ হয়েছিল, তাতে এসেছিলেন তিনি। এতে শিশু-কিশোরদের প্রতি কিছু উপদেশমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। তাঁর সঙ্গে কোনো কথা না হলেও আমি অভিভূত দৃষ্টিতে তাঁকে দেখছিলাম। তখনো তিনি বঙ্গবন্ধু হননি, ছয় দফা দেননি, কিন্তু তারপরও এ দেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে তাঁর সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল। তখন কি ভাবতে পেরেছিলাম, এই মহান মানুষের সান্নিধ্যে আমার ক্ষুদ্র জীবন একদিন মহিমান্বিত হয়ে উঠবে?

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সামনাসামনি প্রথম সাক্ষাতের সময় মনে নেই। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমার বন্ধু শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে দৈনিক ইত্তেফাক অফিসে দেখা। মনি আমার হাত ধরে বললেন, ‘চলো আমার সঙ্গে।’ কোথায় যাব, জানার অবকাশ ছিল না। মনির মোটরসাইকেলের পেছনে বসে পুরানা পল্টনে আওয়ামী লীগ অফিসে এলাম। বায়তুল মোকাররমের উল্টো দিকে একটি বাড়ির দোতলায় মনি উঠে গেলেন আমাকে নিয়ে। সিঁড়ির পাশে ঘরে ঢুকেই মনি বললেন, ‘মামা, আনছি।’ চোখের সামনে আকস্মিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে দেখে আমার বিমুগ্ধ বিস্ময়ের ঘোর কাটতে চায় না। ঘরে তিনি একাই ছিলেন। মাত্র কয়েক মিনিট আমরা ছিলাম তাঁর সামনে। তিনি দু-একটি কথা বলেছিলেন আমার সঙ্গে। ফিরে আসার পরে আমার বারবার মনে হচ্ছিল, মনির ‘আনছি’ কথাটার মানে কী? তিনি কি আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যেতে বলেছিলেন? বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে গেলে শেখ মনির প্রসঙ্গ অনিবার্যভাবে উপস্থিত হয়। ষাটের দশকের প্রারম্ভে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমি দৈনিক ইত্তেফাক-এর বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে কাজ করি। সাংবাদিকতার সুবাদে তখনকার ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কাজী জাফর আহমদ, সিরাজুল আলম খান, ওবায়দুর রহমান, ফেরদৌস আহমদ কোরেশীসহ অনেকে। মনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা একটু বেশিই ছিল। আজও মনে পড়ে মনিদের আরামবাগের বাড়িতে একদিন সারা দিন একসঙ্গে ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধকালে কলকাতাতেও আমরা প্রায়ই আলাপ-আলোচনা করতাম। উভয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম বিধায় মনি তাঁর অনেক বই দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছিলেন। অন্য দিকে মনি ছিলেন আমার প্রকাশিত কবিতা ও গল্পের অনুরক্ত পাঠক। সম্ভবত এ কারণেই যখন ১৯৬৯ সালে জয় বাংলা নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন মনি আমাকে কাহিনি, সংলাপ ও চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্ব নিতে বলেন। তবে জয় বাংলা ছায়াছবিটি নিয়ে মনির সঙ্গে তখন আমার প্রবল মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। মনির কথা ছিল, ছয় দফা নিয়ে ছয়টি পৃথক কাহিনি লিখে জয় বাংলা সিনেমাটি নির্মাণ করতে হবে। আমার বক্তব্য ছিল, ছয়টি পৃথক গল্প হলে তা ফিচার ফিল্ম হবে না, ডকুমেন্টারি হতে পারে। যাহোক, মনির কথাই শেষ পর্যন্ত আমাকে মেনে নিতে হয়। জয় বাংলা ছায়াছবিটির পরিচালক ছিলেন ফখরুল আলম ও প্রযোজক ছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ আবুল খায়ের।

সম্ভবত জয় বাংলা ছায়াছবির কারণে বঙ্গবন্ধু আমার খোঁজখবর রাখতেন। ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বাসভবনটি ছিল ছাত্রনেতাদের পারস্পরিক আলোচনার কেন্দ্র। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না, আবদুল ওহাব, এস এম ইউসুফ, শহীদ আবদুর রব, শহীদ ফরহাদ হোসেনসহ অনেকে। শিক্ষক হয়ে ছাত্র নিয়ে ‘রাজনীতি’ করার অভিযোগে অনেক শিক্ষক আমাকে পছন্দ করতেন না। বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে জানতেন। তবে তিনি কখনো তা বারণ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দু-একজন ছাত্রনেতার কাছে জেনেছি, বঙ্গবন্ধু আমার কথা জানতে চেয়েছেন। ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে একসময় আমার চাকরি চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সেটা হয়নি; কারণ, দেশ তখন অতিদ্রুত স্বাধীনতার পথে ধাবিত হচ্ছিল।

১৯৭১ সালে আক্ষরিক অর্থে আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম না। যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার সাহস ও সুযোগ আমার ছিল না। আমি মুজিবনগর সরকারের তথ্য বিভাগের চাকরিতে যোগ দিই। এ ছাড়া কথিকা পাঠক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আমাকে বঙ্গভবনে ‘রাষ্ট্রপতির স্পেশাল অফিসার’ পদে নিয়োগ করেন। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু আমাকে ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেন এবং আমি প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হই। এটা ছিল জনপ্রশাসনের দৃষ্টান্তবিহীন একটি বিরল সিদ্ধান্ত।

বঙ্গবন্ধুর অধীনে সরাসরি দায়িত্ব পালন আমার কাছে অলৌকিক ঘটনা বলে মনে হয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হন। যাঁরা এর আগে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সঙ্গে কর্মরত ছিলেন, তাঁদের অনেকে বিভিন্ন দিকে বদলি হয়ে যান। আমি তখন রাষ্ট্রপতির ‘জনসংযোগ অফিসার’ পদে কর্মরত। এরপর কোথায় যাব, তা ছিল অনিশ্চিত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হওয়ার দিনই তিনি আমাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে থাকবা।’ সেদিনই আমি উপসচিবের পদমর্যাদায় ‘রাষ্ট্রপতির সহকারী প্রেস সচিব’ পদে নিযুক্তি পাই। তোয়াব খান ছিলেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব ও মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ছিলেন তথ্য অফিসার। দুজনের মাঝখানে আমার কী করণীয়, তা বুঝতে পারছিলাম না। পরবর্তী সময়ে দেখা গেল, আমার ওপর বিভিন্ন চিঠিপত্রের যোগাযোগ, বক্তৃতা লেখা এবং একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর অনুলেখকের দায়িত্ব বর্তেছে। বঙ্গবন্ধু নিজেই এই দায়িত্ব পালনের জন্য আমাকে নির্দেশ দেন। আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার আত্মজীবনী লেখবা। আমি যদি সময় দিবার না পারি, তা–ও জোর কইরা লেখাইবা।’

আত্মজীবনী লেখার কাজটি আগে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ও আবদুল তোয়াব খান করতেন। ফুলস্কেপ সাইজে প্রায় ৩০০ পাতা টাইপ করা একটা বাঁধানো খাতা আমাকে দেওয়া হলো। এটা আত্মজীবনীর প্রাথমিক খসড়া। বাল্যকাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত লেখা হয়ে গেছে। আমাকে পরবর্তী সময়ের জীবনী অংশ রচনায় অনুলেখকের কাজ করতে হবে। ঠিক হলো, দুপুরের খাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যখন বিশ্রাম নেবেন, তখন আমি টেপরেকর্ডারে তাঁর কথাগুলো তুলে নেব। এ সময়টা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অন্য কেউ থাকবে না। তাঁকে একাকী পাওয়ার কথা ভেবে নিজের মনে শিহরণ অনুভব করলাম। কিন্তু মাত্র তিন-চার দিন ডিকটেশন নেওয়ার পর তিনি বেঁকে বসলেন। বললেন, ‘তোমার জন্য বিশ্রাম পর্যন্ত নিবার পারি না।’ আমি বললাম, ‘স্যার! আপনিই তো বলেছেন জোর করে লেখাতে। আপনার বিশ্রামের সময় বিরক্ত করতে আমারও খারাপ লাগে। কিন্তু কত কিছু লেখা বাকি পড়ে আছে। আইয়ুবের মার্শাল ল, আপনার ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা মামলা, মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের জেলে আপনার দিনগুলো—এসব কখন লেখা হবে?’ ‘লেখব, লেখব।’ তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘সব কাজ আমি গুছাইয়া আনছি। দেশের কাজ, ফ্যামিলির কাজ—সব শ্যাষ কইরা আনলাম। তোমার আত্মজীবনী লেখার কাজও পইড়া থাকব না।’

বঙ্গবন্ধুর অধীনে আমার কার্যকাল খুব বেশি দিনের নয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তাঁর যে অপার স্নেহ লাভ করেছি, তা আমার জীবনের অমূল্য সম্পদ। তাঁর স্নেহশীলতার অজস্র স্মৃতি থেকে দুটি স্মৃতির কথা তুলে ধরছি, যা আমার লেখা বঙ্গভবনে পাঁচ বছর বইয়ে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। ৩০ মার্চ ১৯৭৫ তারিখে বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ইন্তেকাল করেন। আমি সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলাম। সম্ভবত এ কারণেই তিনি আমাকে ডেকে তাঁর বাবার চল্লিশায় টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার কথা বলেন। ঢাকা থেকে ‘গাজী’ জাহাজে টুঙ্গিপাড়া যেতে ডাইনিং স্পেসের একটি সোফায় আমি রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। মধ্যরাতে পরিদর্শনে বেরিয়ে বঙ্গবন্ধু আমার মাথার নিচে কোনো বালিশ না দেখে নিজের দুটি বালিশের একটি আমার মাথার তলে দিয়ে যান। সেই ঘটনাটির কথা ভেবে আজও আমার দুই চোখ সিক্ত হয়ে ওঠে। আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমরা সড়কপথে টাঙ্গাইলে যাই মাওলানা ভাসানীর আমন্ত্রণে। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে খুলনায় গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরের বাড়িতে। হেলিকপ্টারের সামনের সারিতে বসেছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পাশে বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক। পেছনের সারিতে রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী তোফায়েল আহমেদ ও আমি। স্টুয়ার্ড এসে ভেজা তোয়ালে দিয়ে গেলেন মুখ মুছতে। আমি দীর্ঘ পথের ক্লান্তি ওই রুমালে মুছতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু দুপুরে অভুক্ত থাকায় ক্ষুধায় রীতিমতো অবশ হয়ে আছে শরীর। কিছুক্ষণ পরে স্টুয়ার্ড ট্রে-ভর্তি খাবার এনে বঙ্গবন্ধুর সামনে ধরলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি খাইছি, খিদা নাই।’ পেছনের দিকে ফিরে আমাকে দেখিয়ে বললেন, ‘মাহবুব খায় নাই। ওরে খাওয়াও।’ তাঁর কথায় আমি অপ্রস্তুতভাবে মাথা নাড়তে তিনি আবার বললেন, ‘তোমার মুখ শুকনা দেইখাই বুঝছি, তুমি খাও নাই। অহন খ্যায়া লও।’ বঙ্গবন্ধুর ওই দরদি দৃষ্টি ও কথায় আমি অভিভূত হয়ে পড়লাম। স্টুয়ার্ড খাবার এনে আমাকে বিশেষভাবে খাওয়ালেন। বঙ্গবন্ধু একবার পেছনে ফিরে দেখলেন, আমি ঠিকমতো খাচ্ছি কি না।

১৯৭৫ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আমার জীবনের একটি স্মৃতিময় দিন। দিনটি তিনি শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কাটাতে ভালোবাসতেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন, আমি শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় কচি–কাঁচার মেলার প্রথম আহ্বায়ক ছিলাম। এ কারণে তাঁর জন্মদিনে ৩২ নম্বরের বাড়িতে যেতে আমাকে বিশেষভাবে আগেই বলে রেখেছিলেন। সকালবেলা আমি যখন ওই বাড়িতে গেলাম, তখনো লোকসমাগম হয়নি। আমি তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেই তিনি মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলেন। শেখ কামাল এসে মিষ্টির প্লেট তুলে দিলেন হাতে। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মাহবুব ভাই, নাশতা করেছেন তো?’ কিছুক্ষণের মধ্যে ছোটমণিরা হাজির হলো ওই বাড়িতে। সকালেই দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় শাপলা কুঁড়ির আসরের সম্পাদক বিমান ভট্টাচার্য ছোটদের নিয়ে হাজির হলেন। বঙ্গবন্ধু আগত শিশুদের আদর করে তাদের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠলেন। আমার বারবার মনে হচ্ছিল, নিজের জন্মদিন বলেই কি তিনি ছোটবেলার কথা স্মরণ করে একেবারে শিশু হয়ে গেছেন? আজ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী বা মুজিব বর্ষে জন্মদিন উদ্‌যাপিত হচ্ছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভের শেষ জন্মদিন আর বঙ্গবন্ধুবিহীন এই জন্মদিনে আকাশ ও পাতালের পার্থক্য।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পূর্বদিন অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্টের বিকেল, সন্ধ্যা ও রাতের ঘটনাপ্রবাহ বিশেষভাবে স্মরণীয়। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। ১৪ আগস্ট দুপুরে তিনি আবদুল তোয়াব খান ও আমাকে ডেকে পরদিনের বক্তৃতা তৈরি করতে বলেন। পরে আরও বলেন, তিনি মৌখিক বক্তৃতা দেবেন, তবে সব তথ্য-উপাত্ত লিখিতভাবে সামনে থাকতে হবে। আমাকে বললেন, ‘শিক্ষাসচিব মোকাম্মেল হকের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে খসড়া তৈরি করো।’ মোকাম্মেল হক অসুস্থতার জন্য না আসায় টেলিফোনে তাঁর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদির ডিকটেশন নিয়ে আমি বক্তৃতা লেখার প্রস্তুতি নিলাম। ওই দিন বিকেলে আকস্মিকভাবে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। রামগতিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে আটজন ভারতীয় উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জে এন দীক্ষিত বললেন, সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া ঠিক হবে না। তিনি এ বিষয়ে দিল্লির সঙ্গে কথা বলছেন। রাত তখন প্রায় নয়টা। বঙ্গবন্ধু বাসায় চলে গেছেন। তাঁকে বিষয়টা জানাতে তোয়াব খানকে বললেন তাঁর ঘরে গিয়ে লাল টেলিফোনে কথা বলতে। বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিলেন, দুর্ঘটনার খবর দেশবাসীকে জানাতে হবে, নইলে তাদের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। তোয়াব খান যখন বঙ্গবন্ধুর অফিসকক্ষে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তখন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের টেলিফোন এল। আমি টেলিফোন ধরলে তিনি জানতে চাইলেন, এত রাতে আমরা অফিসে কী করছি? এই টেলিফোন যে উদ্দেশ্যমূলক ছিল, তা তখন বুঝতে পারিনি।

এদিনের আরেকটি ছোট ঘটনা আমার স্মৃতিতে সতত ভাস্বর। বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ফরাসউদ্দিন বিদেশে চলে যাবেন বলে সে রাতে তাঁর জন্য ফেয়ারওয়েল ডিনারের আয়োজন করা হয়। এ জন্য বঙ্গবন্ধু আগেভাগেই বাসায় চলে যান। যাওয়ার সময় অনেকটা কাকতালীয়ভাবে আমি তাঁকে গাড়িতে তুলে দিলাম। বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, ‘ফরাসের ডিনার। আমি তো থাকতে পারি না।’ আমার দিকে উজ্জ্বল দৃষ্টিতে তাকালেন। কে জানত সেটাই ছিল তাঁর শেষ দৃষ্টিবিনিময়। আজ যখন বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ হয়, তাঁকে শেষ দেখার এই স্মৃতিটাই তখন মনে ভেসে ওঠে। সেই উজ্জ্বল চোখের দৃষ্টি আমি কখনো ভুলতে পারি না।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের শোক সন্তাপের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে প্রথমেই মনে হলো, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার করতে হবে। সেটি আমার অফিসকক্ষে টেবিলের ড্রয়ারে তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা ছিল। ১৭ আগস্ট গণভবনে সেটি আনতে গেলে এক মেজর আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তাঁর কথাবার্তা ও ঔদ্ধত্যে টেবিলের সামনে গিয়ে তালাটা ছুঁয়ে দেখলেও মেজরের উপস্থিতিতে ওটা বের করতে সাহস হলো না। মনে হলো, এতে আমার প্রাণসংশয় দেখা দিতে পারে এবং পাণ্ডুলিপিও নষ্ট করা হতে পারে। ভাগ্যের কী পরিহাস! মাত্র কয়েক দিন আগে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমিতে গিয়ে বন্ধু শামসুজ্জামান খানকে দেখাই। তিনি সেটা উল্টেপাল্টে দেখে বললেন, ‘আমাকে দাও, আমি পড়ে দেখি।’ কিন্তু পাণ্ডুলিপিটি নিয়ে কাজ করছি বলে আমি রাজি হলাম না। সেদিন যদি ওটা তাঁর কাছে রেখে আসতাম কিংবা ১৪ আগস্টে ওটা বাসায় নিয়ে আসতাম, তাহলে পাণ্ডুলিপিটি রক্ষা পেয়ে যেত। এসব কথা ভেবে এখনো আত্মশোচনা হয়। কিন্তু ভবিতব্যের লেখা কে এড়াতে পারে?

পরবর্তীকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধারের চেষ্টা করলেও তাতে সফল হইনি। ১৪ বছর পর ১৯৮৯ সালে আমি পূর্ত মন্ত্রণালয়ে কর্মরত অবস্থায় খবর পেলাম, রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নতুন গণভবন পরিদর্শন করে সেখানকার যাবতীয় নথি ও বইপত্র পুড়িয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন। নতুন গণভবনের দুটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুর সচিবালয়ের সব দলিলপত্র ও নথিপত্র টাল করে রাখা হয়েছিল। হঠাৎ আমার মনে হলো, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীটা যদি ওই সব নথিপত্রের মধ্যে পাওয়া যায়! আমি গণভবনে ছুটে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নথিপত্রের মধ্যে পাগলের মতো পাণ্ডুলিপিটি খুঁজলাম, কিন্তু পেলাম না। সেখানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত কিছু নথিপত্র ও দলিলপত্র পাওয়া গেল। বিশেষভাবে পেলাম পাকিস্তান হোম মিনিস্ট্রির বঙ্গবন্ধু–সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি নথি। দুপুরে লাঞ্চের বিরতিতে গণভবনে দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের দৃষ্টি এড়িয়ে ওই সব নথিপত্র কৌশলে আমি তুলে নিয়ে এলাম। নথিগুলো হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পেল।

২০১৮ সালের শেষ দিকে বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দেখে সামনে এগিয়ে আসেন। তিনি আমাকে বলেন, ‘আপনার কাছে তো আব্বার বক্তৃতা আছে। সেগুলো আমাকে দেন না কেন?’ জবাবে আমি বললাম, ‘বক্তৃতা যদিও স্পুলে ধারণ করা, এত বছরে তা নষ্ট হয়ে গেছে কি না, বলতে পারব না।’ তিনি বললেন, ‘নষ্ট হলেও আমি তা উদ্ধার করে নিতে পারব। আমার কাছে অত্যাধুনিক মেশিন আছে।’ তখন আমি জানালাম, ‘বক্তৃতা আপনাকে দেব।’ প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু যখন বক্তৃতা দিতেন, একটি টেপরেকর্ডারে আমি তা টেপ করে নিতাম। বক্তৃতার পরে বঙ্গবন্ধুকে তা বাজিয়ে শোনাতে হতো। তিনি কোনো কোনো অংশের ব্যাপারে বলতেন, ‘এটা যাবে না, এডিট করে দাও।’ তাঁর নির্দেশ আমি প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টকে জানিয়ে দিতাম।

প্রধানমন্ত্রী সেদিন কথা বলার কিছুক্ষণ পরে তাঁর মুখ্য সচিব কামাল চৌধুরী আমাকে বললেন, ‘আপনার কাছে বঙ্গবন্ধুর কিছু জিনিসপত্র আছে। সেগুলোর জন্য আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।’ উত্তরে আমি জানালাম, ‘আমার কাছে বঙ্গবন্ধুর যে বক্তৃতা আছে, সেটার টেপ বা স্পুল দিতে পারি। তবে অন্যান্য ডকুমেন্ট আমি এখন দিতে পারব না। ওগুলো দিয়ে আমি একটি বই লিখছি। বইটি লেখা শেষ হলে আমি সবই তাঁর হাতে তুলে দেব।’ আসলে আমার কাছে সংরক্ষিত বঙ্গবন্ধুর নথিগুলো নিয়ে একটি বই লেখার কথা ভেবেছি কয়েক বছর ধরেই। বইটির নাম দিয়েছি অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পাকিস্তান আমলের এসব নথিপত্রে হোম ডিপার্টমেন্ট এটাই নথির নামকরণ করেছিল। বইটির প্রথম অধ্যায়ের কিছুটা লিখেছিলাম আমি নির্বাচন কমিশনে যোগ দেওয়ার আগে। কিন্তু কঠিন অসুখে আক্রান্ত হওয়ার পর আমার মনে হলো, বইটি আমার পক্ষে আর লেখা সম্ভব হবে না। ইতিমধ্যে বক্তৃতার স্পুলটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিলাম। অনেক ভেবেচিন্তে স্থির করলাম, বঙ্গবন্ধুর যা কিছু স্মারক আমার কাছে আছে, তা তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেব। প্রায় ৪৪ বছর ধরে এসব সম্পদ আমি ব্যক্তিগতভাবে সংরক্ষণ করেছি। এ কথা ভাবতে ভাবতে দুই চোখ ভিজে উঠল। তবে এই অমূল্য সম্পদগুলো নষ্ট হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন জানাতে তাঁর একান্ত সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ফোনে বলেন, ‘১২ মার্চ ২০১৯ তারিখে দুপুর ১২টায় তিনি আমাকে সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ধরনের একান্ত সাক্ষাৎ ইতিপূর্বে আমার আর হয়নি। নির্দিষ্ট দিনে যথাসময়ে গণভবনে তাঁর অফিসকক্ষে আমার ডাক পড়ল।’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তখন কেবল তাঁর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে সব নথিপত্র ও স্মারকসামগ্রী হস্তান্তর করলাম। তিনি একে একে ধরে ধরে সব জিনিস বুঝে নিতে চাইলেন। আমি বঙ্গবন্ধুর একটি অটোগ্রাফ করা ফটোগ্রাফ তাঁকে উপহার দিলাম। এটি বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর চার দিন আগে আমাকে স্বাক্ষর করে দিয়েছিলেন। আমার ধারণা, তাঁর এই ফটোগ্রাফটি সর্বশেষ স্বাক্ষরিত ফটোগ্রাফ। সে হিসেবে এটার গুরুত্ব জানিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, এই তারিখের পরে আর কোনো স্বাক্ষরিত ফটোগ্রাফ তিনি পেয়েছেন কি না! জবাবে তিনি বললেন, ‘কী করে পাব? আমি তো তখন দেশেই ছিলাম না।’

আগেই বলেছি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তদানীন্তন পাকিস্তান হোম মিনিস্ট্রির নয়টি নথি আমার কাছে ছিল। এগুলো তাঁকে তুলে দিলাম। এসব নথিতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের চিঠিপত্র চালাচালির বিবরণ ছিল। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার অনুলিপি, যা গোয়েন্দারা লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তা-ও হস্তান্তর করি। এ ধরনের নথি প্রধানমন্ত্রী অবশ্য পুলিশের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা থেকেও সংগ্রহ করেছেন বললেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছবি তাঁর কাছে হস্তান্তর করি। কোনো কোনো ছবি তাঁর কাছে নেই বলে জানালেন। এ ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠির বান্ডিল ছিল। এতে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুকে লেখা চিঠিপত্র একত্র ছিল। এর মধ্যে সাহিত্যিক মনোজ বসু, গজেন্দ্র কুমার মিত্র, পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী মঞ্জুর কাদেরের স্ত্রীর চিঠিও ছিল। এ ছাড়া আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধকালে টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার দায়ে আটক আসামিদের ৫২টি মুচলেকাপত্র ছিল, যাতে আবেদনকারীরা তাঁদের দুষ্কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। তাঁদের পরিণতি সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু তাঁদের ক্ষমা করেছিলেন কি না, বোঝা যায় না। অন্য দিকে বঙ্গবন্ধুর খাদ্যতালিকার দুটি রেজিস্টারে আমি সংগ্রহ করেছিলাম। এগুলো ১৯৭৩-৭৪ সালের বাজারের হিসাবসংক্রান্ত। বঙ্গবন্ধুর জন্য গণভবনে যে বাজার করা হতো, তার মূল্যতালিকাসমেত এই খাতা দুটিতে তারিখসহ হিসাব তুলে রাখা হতো। যাঁরা বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিজীবন নিয়ে গবেষণা করবেন, তাঁদের কাছে এর মূল্য অপরিসীম। এতে বঙ্গবন্ধুর খাদ্যরুচির পরিচয় আছে। এটি প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোর সময় আমি বললাম, বঙ্গবন্ধু কী ধরনের খাবার পছন্দ করতেন, তার পরিচয় পাওয়া যাবে এতে। জবাবে তিনি বললেন, ‘আব্বার খাবার তো বাসা থেকে আসত।’

এরপর বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর প্রসঙ্গ উঠল। আমি আত্মজীবনীর প্রসঙ্গে আমার যা জানা ছিল, সবিস্তারে বললাম। আত্মজীবনীর প্রায় সবটুকু টেপরেকর্ডারে ধারণ করা হয়েছিল। টেপগুলো কোথায় আছে তিনি জানতে চাইলে আমি বললাম, গণভবনের কম্পট্রোলার আবুল খায়েরের কাছে সেগুলো রক্ষিত ছিল। আবুল খায়ের দীর্ঘদিন আগে মারা গেছেন। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতার টেপের বিষয়টি জানেন বলেই আমার ধারণা হলো। তবে তা উদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, তা তিনি বললেন না। যাহোক, আমি দুপুরবেলা দীর্ঘ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলাম। ওই সময়ে অনেক বিশিষ্টজন তাঁর সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ ছাড়া আর কোনো বিষয়ে আমার আলোচনা হয়নি। এরপর তাঁর সঙ্গে আর কোনো দিন দেখা হয়নি।

গণভবন থেকে ফিরতে গাড়িতে উঠে নিজেকে হালকা অনুভূত হলো। ৪৪ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর জিনিসগুলো ব্যক্তিগতভাবে সংরক্ষণ করেছিলাম এ দিনটির জন্য। প্রধানমন্ত্রীর হাতে এসব হস্তান্তর করে নিজেকে খুবই ভারমুক্ত মনে হলো। ফিরে আসার সময় ভাবলাম, বঙ্গবন্ধুর সব জিনিস তো তাঁর কন্যার হাতে তুলে দিলাম, কেবল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রইল আমার কাছে, যা আমৃত্যু মনের মণিকোঠায় জাগরূক থাকবে।

মাহবুব তালুকদার: নির্বাচন কমিশনার

আপনার ইমেইল প্রদর্শন করা হবে না।