শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়াটা ব্যয় নয় বিনিয়োগ – ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী

0 ১৬৫

আলোকিত লংগদু ডেক্সঃ

করোনাভাইরাস-সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ইন্টারনেটসহ সার্বিক ডিজিটাল প্রযুক্তির চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদা পূরণে সরকার কতটা সক্ষম? এ বিষয়ে কতটা প্রস্তুতি ছিল? চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে? এসব প্রশ্নে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। কিছু  সীমাবদ্ধতা, মোবাইল ফোন অপারেটরদের অসহযোগিতা এবং টাওয়ার কম্পানিগুলোর নিষ্ক্রিয়তার কথাও বলেছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেছেন, যদি বিনা মূল্যেও ইন্টারনেট দেওয়া হয়, তাহলে সেটা ব্যয় নয়, বিনিয়োগ।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, “২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়তে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব ছিল, তা আমরা নিয়েছি। তবে অনেক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আমাদের এখনকার চাহিদাটা টুজি বা থ্রিজির নয়। নগরবাসীর চাহিদা এখন গ্রামেরও চাহিদা হয়ে গেছে। ছাত্র-ছাত্রীরা এখন বাড়িতে বসে ইন্টারনেটের মিনিমাম একটা স্পিড চায়। কিন্তু গ্রামে আমরা এখনো সেভাবে মোবাইল ইন্টারনেট, ফোরজি বা ভোল্টি দিতে পারিনি।”

মন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে যে কারিগরি সক্ষমতা থাকা উচিত ছিল, তা নেই। অপারেটররা প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম নিচ্ছে না। বড় দুই অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির যে স্পেকট্রাম আছে, তা গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। রবিরটা চাহিদার কিছুটা কাছাকাছি আছে। গ্রামীণের তা-ও নয়। গ্রামীণের স্পেকট্রাম আছে মাত্র ৪০ মেগাহার্জ। কিন্তু থাকা উচিত ছিল ১০০ মেগাহার্জ। গ্রামীণফোন স্পেকট্রামে তেমন বিনিয়োগ করেনি। এতে গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে। তবে বিষয়টা নিয়ে আমরা ভাবছি। গ্রাম পর্যন্ত ফোরজি নেটওয়ার্ক গেলে চাহিদা কিছুটা পূরণ হবে। তবে চাহিদা ক্রমেই বাড়বে। সে কারণে আমাদের আরো কিছু করতে হবে।’

করণীয় প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের চাহিদা এখন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গ্রামের মানুষ এখন ফাইবার অপটিক কানেকটিভিটি চায়। ইতিমধ্যে ৫৮৭টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওয়াই-ফাই ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি দিয়েছি। এর মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এই করোনার দুর্যোগে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করতে পারছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অনেকের হাতে প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই, ইন্টারনেট নেই এবং এসব কেনার সামর্থ্যও নেই। কম দামে ডিভাইস সরবরাহের জন্য স্থানীয় উৎপাদকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে এবার সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে বিষয়টা নিয়ে আমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছি। আবেদন জানিয়েছি এটা না বাড়ানোর জন্য। শিক্ষা খাতে বিশেষ ব্যবস্থা করার কথাও বলেছিলাম। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়া হলেও তা ব্যয় নয়, বিনিয়োগ হবে।’

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘টেলিটকের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম অর্ধেকেরও কমে নামিয়ে এনেছি। বিটিসিএলের ব্যান্ডউইডথও একইভাবে কমিয়ে আনছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কম খরচে ইন্টারনেট দেওয়ার পথ খুঁজছে বিটিসিএল। ইতিমধ্যে তিন হাজার ৮০০ ইউনিয়নে কানেকটিভিটি তৈরি করা হয়েছে। আরো ৭৭৭টি ইউনিয়নে কানেকটিভিটির জন্য প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। আমাদের স্যাটেলাইট থেকে চরাঞ্চলসহ দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। ২০০৮ সালেই অনুভব করেছিলাম এই ডিজিটাল রূপান্তরটি অনিবার্য। করোনা সেই অনিবার্যতাকে আরো স্পষ্ট করে তুলেছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ফাইভজির জন্য আমরা ইতিমধ্যে রোডম্যাপ তৈরি করেছি। তবে ফাইভজির স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে এখনো বিশ্বে বিতর্ক আছে। এই স্ট্যান্ডার্ড জিএসএমএ চূড়ান্ত করার পর আমরা তা অনুসরণ করতে চাই।’

লাইসেন্স নেওয়ার পরও টাওয়ার কম্পানিগুলো কাজ শুরু করেনি। এ বিষয়ে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা মোবাইল অপারেটরদের নতুন টাওয়ার বানানো বন্ধ করে দিয়েছি। অন্যদিকে টাওয়ার কম্পানিগুলো টাওয়ার বানাচ্ছে না। ফলে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে, কম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ও ব্যবসা করার সক্ষমতা নেই। নইলে চারটি কম্পানির একটিও কেন এগিয়ে আসছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’

 

 

আপনার ইমেইল প্রদর্শন করা হবে না।