বিসমিল্লাহর তাফসীর ও তাৎপর্য আলোচনা

0 ৩২০

ভূমিকা

বিসমিল্লাহ আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ও নির্ভরতার প্রতীক।

বিসমিল্লাহ শয়তানকে বিতাড়িত করার প্রতীক।

বিসমিল্লাহ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধানকারী।

বিসমিল্লাহ কর্মসমূহকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে।

বিসমিল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা সমূহের মুকুট।

বিসমিল্লাহ পুলসিরাত অতিক্রম করার লাইসেন্স।

বিসমিল্লাহ নরকের অগ্নিশিখা সমূহকে নির্বাপিত করে।

বিসমিল্লাহ ব্যাথাসমূহের নিরাময়ক।

বিসমিল্লাহ সমস্যাসমূহ সমাধানের চাবিকাঠি।

বিসমিল্লাহ কোরআনের চাবিকাঠি।

বিসমিল্লাহ আল্লাহ তা’ আলার মহিমান্বিত নাম।

বিসমিল্লাহ প্রার্থনা কবুল হওয়ার শর্ত । রাসূল(সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- যে দোয়া বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু হয় তা প্রত্যাখ্যিত হয় না।

বিসমিল্লাহ প্রতিটি আসমানী গ্রন্থের সূচনায় রয়েছে।

বিসমিল্লাহ মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে।

বিসমিল্লাহ আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ নাম।

বিসমিল্লাহ মানুষের আত্মিক রোগ সমূহের নিরাময়ক।

বিসমিল্লাহ আল্লাহর দাসত্ব এবং তার প্রতি নির্ভরশীলতার প্রতীক।

বিসমিল্লাহ আসমানের তালা সমূহের চাবি।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজ কথাবার্তা,খাওয়া দাওয়া,লেখাপড়া,ভ্রমন,ঘুমানো ইত্যদি আল্লাহর নামে শুরু করা এবং তা দ্বারা সুবাসিত করা কতই না উত্তম।

প্রথম অধ্যায়

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর গুরুত্ব

১. আল্লাহর নামের আশ্রয়ে মুক্তি :- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘ আলা তিনটি জিনিষকে মানুষের  পরিত্রাণ,মুক্তি,বিজয় এবং সফলতার উপাদান হিসেবে গণ্য করেছেন।

“قد افلح من تزكي و ذكر اسم ربه فصلي “

সফলকাম হয়েছে  সেই ব্যক্তি,যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে পরিশুদ্ধ করেছে,আর স্বীয় প্রভূর নাম স্মরণ করে এবং নামাজ আদায় করে।১

২. বিসমিল্লাহর বরকত :- আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন :

“فضلت ببسم الله الرحمن الرحيم”

আমি বিসমিল্লাহ দ্বারা অন্যান্য নবীদের উপর মর্যাদাবান হয়েছি।২

৩. আনুগত্যের দ্বার উন্মোচন : ইমাম সাদেক (আ.) থেকে বর্ণিত-

“إغلقوا ابواب المعصية بلأستعاذة و افتحوا ابواب الطاعة بالتسمية”

অন্যায় অনাচারের দরজাসমূহকে ইস্তিয়াজা (আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম) দ্বারা বন্ধ করে দাও আর আনুগত্যের দ্বারসমূহকে তাসমিয়াহ (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) দ্বারা উন্মুক্ত করে দাও।৩

৪. প্রত্যেকটা গ্রন্থের চাবি :  রাসূল (সা.) বলেছেন –

” بسم الله الرحمن الرحيم مفتاح كل كتاب “

বিসমিল্লাহ প্রতিটি বইয়ের চাবি।৪

৫ . আল্লাহর মহিমান্বিত নামের নিকটবর্তী :ইমাম হাসান আসকারী ( আ .) বলেছেন – সত্য

“بسم الله الرحمن الرحيم أقرب الي اسم الله الأعظم من سواد العين الى بياضها “

চোখের কালো অংশের সাথে শুভ্র অংশের নিকটবর্তীতার চেয়েও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহর মহান নামের অধিক নিকটবর্তী।৫

৬. বিসমিল্লাহর পূর্বে ইস্তিয়াযা :- মহান আল্লাহ তা‘ আলা পবিত্র কোরআনে শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে বলেছেন যে,

“ فاذا قرأت فاستعذ بالله من الشيطان الرجيم ”

যখনই কোরআন তেলাওয়াত করবে অভিশপ্ত শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে।৬   কেননা আমরা আমাদের ইবাদত বন্দেগীতে শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে নিরাপদ নই। ঐ অভিশপ্ত আমাদেরকে পথভ্রষ্ঠ এবং আমাদের ইবাদত বন্দেগীকে নষ্ট করে ফেলে। আমাদেরকে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করা থেকে বিরত রাখে।‘ মুকতানিয়াতুদ দার’এর লেখক স্বীয় গ্রন্থে এভাবে বর্ণনা করেছেন,কেন বিসমিল্লাহর পূর্বে এবং তাকবীরের পরে ইস্তিয়াযা করবো ? উত্তরে বলেছেন : বাসমালাহর (আল্লাহর নাম নেয়ার) পূর্বে ইস্তিয়াযাকে (আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা) স্থান দেয়ার কারণ  (تحليه ) সুন্দর বৈশিষ্টে সজ্জিত হওয়ার পূর্বে (تخليه ) গুনাহ থেকে মুক্ত ও পবিত্র হওয়াকে স্থান দেয়ার ন্যায়। মানুষ প্রথমে গোসল করবে এবং নোংরা ও ময়লা থেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হবে তারপর সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করবে এবং নিজেকে সুবাসিত করবে।

অনুরূপভাবে অবশ্যই প্রথমে শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নিব এবং তার ষড়যন্ত্র ও প্রতারণা থেকে নিরাপদ হব। অত:পর আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের ময়দানে পদার্পন করব।

অবশ্য এটা জেনে রাখা জরুরী যে,শয়তান এক নিকৃষ্ট ও দূর্গন্ধময় জিনিষ,খুব অল্প সংখ্যকই তার সাথে সংগ্রাম করে সফলতা লাভ করতে পারে। কেননা অধিকাংশ মানুষই শয়তানের সাথে সংগতিপূর্ণ এবং তার সহচর আর ইবাদত বন্দেগীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত দূর্বল এবং অক্ষম।

৭. বিসমিল্লাহ্ লেখার প্রয়োজনীয়তা : ইমাম সাদেক(আ.)বলেছেন –

“لا تدع كتابة بسم الله الرحمن الرحيم فى الكتاب و ان كان بعده شعر “

তোমরা তোমাদের লিখনীসমূহে বিসমিল্লাহ লিখা থেকে বিরত থেকো না। এমনকি একটি কবিতা হলেও।৭

৮. সর্বোত্তম লিপিতে সন্নিবেশিত করা ( লিপিবদ্ধ করা) : ইমাম সাদেক(আ.)বলেছেন-

اكْتُبْ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ مِنْ أَجْوَدِ كِتَابِكَ وَ لَا تَمُدَّ الْبَاءَ حَتَّى تَرْفَعَ السِّين””

অর্থাৎ“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”কে সর্বোত্তম লিপিতে লিপিবদ্ধ কর,‘ বা’অক্ষরটিকে সম্প্রসারিত করোনা যেন‘ ছীন’কে সম্প্রসারিত ও লম্বিত করে লিখতে পার।৮

৯. সবচেয়ে  মহত্বপূর্ণ আয়াত : এক ব্যক্তি ইমাম রেযা(আ.)কে জিজ্ঞেস করল”

“اي آية اعظم في كتاب الله “

পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে বেশী মর্যাদাবান আয়াত কোনটি ? ইমাম উত্তরে বললেন –“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”।৯

১০. সমস্ত আসমানী কিতাব সমূহে “ বিসমিল্লাহর ” আবির্ভাব : ইমাম সাদেক(আ.)থেকে বর্ণিত  হয়েছে  –

“مانزل كتاب من السماء الا و اوله بسم الله الرحمن الرحيم”

আসমান থেকে এমন কোন কিতাব অবতীর্ণ হয়নি যার প্রথমে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম নেই।১০

১১. সূরা হামদের অংশবিশেষ : এক ব্যক্তি হযরত আলী(আ.)কে জিজ্ঞেস করল“আস সাবউল মাছানী” কি ? তিনি বললেন : সূরা হামদ,তিনি আরও বললেন সূরা হামদের সাতটি আয়াত রয়েছে“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” তারই একটি আয়াত।১১

১২. ঈমানদার ব্যক্তির নিদর্শন : ইমাম হাসান আসকারী(আ.)থেকে বর্ণিত,

“عَلَامَاتُ الْمُؤْمِنِ خَمْسٌ صَلَاةُ الْخَمْسِينَ وَ زِيَارَةُ الْأَرْبَعِينَ وَ التَّخَتُّمُ فِي الْيَمِينِ وَ تَعْفِيرُ الْجَبِينِ وَ الْجَهْرُ بِبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ”

অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তির আলামত চারটি। ( ১ ) রাত দিনে ফরজ ও নফল সহ ৫১ রাকাত নামাজ আদায় করা। ( ২ ) ডান হাতে আংটি পরিধান করা। (৩ ) নামাজের পর কপাল মাটিতে রেখে সেজদারত অবস্থায় “ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ” উচ্চস্বরে বলা। ( ৪ ) যিয়ারতে আরবাঈন পাঠ করা। ১২

১৩. হযরত ঈসা ( আ.) এর প্রথম শিক্ষা : ইমাম বাকের (আ.) থেকে বর্ণিত,হযরত ঈসা(আ.)জন্মগ্রহন করলেন,তিনি খুব দ্রুত বেড়ে উঠতে লাগলেন এমনকি সাত মাস বয়সে তার মা তার হাত ধরে শিক্ষকের নিকট নিয়ে গেলেন।

শিক্ষার শুরুতেই শিক্ষক বললেন,বল“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”ঈসা (আ.) তা পূনরাবৃত্তি করলেন।১৩

বিসমিল্লাহ এর প্রভাব

১৪. যে দোয়া প্রত্যাখ্যিত হয় না :  ইমাম সাদেক (আ.) থেকে বর্ণিত,

“لا يرد دعاء اوله بسم الله الرحيم”

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দ্বারা যে দোয়া শুরু করা হয় তা প্রত্যাখ্যিত হয়না।১৪

১৫. জাহান্নাম থেকে অব্যহতি :

“اذا قال المعلم للصبى بسم الله الرحمن الرحيم وقال الصبى بسم الله الرحمن الرحيم كتب الله برائة لأبويه و برائة للمعلم”

যখন শিক্ষক কোন শিশুকে উদ্দেশ্য করে বলে“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”এবং ঐ শিশুও বলে“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”আল্লাহ তা’আলা তার পিতামাতা এবং তার শিক্ষকের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফরমান জারী করেন।

১৬. বিসমিল্লাহর সাহায্যে পানির উপর দিয়ে চলাচল : পর্যটন,পরিভ্রমণ এবং পরিক্রম হযরত ঈসা(আ.)এর শরীয়তে ইবাদতেরই একটা অংশ ছিল। এই পর্যটন পরিভ্রমণ ও পরিক্রমের কোন এক সফরে,ঈসা (আ.) একজন বেটে লোকের সাথে সাগরের কিনারে আসলেন। ঈসা(আ.)বললেন “بسم الله بصحة منه ” আর্থাৎ আল্লাহর নামে যার উপর আমার পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে বলেই  তিনি পানির উপর দিয়ে পথ চলতে শুরু করলেন কিন্তু পানিতে নিমজ্জিত হলেন না।

বেটে লোকটাও একই বাক্য বলে পানিতে ডুবে না গিয়ে বরঞ্চ তার উপর দিয়ে হেটে যেতে লাগল। পথিমধ্যে বেটে লোকটিকে আত্ম অহংকার চেপে বসল এবং নিজে নিজে বলতে লাগল আমি ঈসার চেয়ে কোন অংশে কম,ঈসা কিসে আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ? কেননা আমিও পানির উপর দিয়ে পথ চলছি।

যখনই এমন কলুষিত চিন্তা করতে লাগল,তার পা দূর্বল হয়ে গেল এবং ডুবে যাওয়ার উপক্রম হল। সে চিৎকার করতে লাগল“ হে ঈসা আমাকে উদ্ধার কর”।

ঈসা (আ.) তার হাত ধরলেন এবং তাকে মুক্তি দিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন কি হল যে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলে ?

সে বলল আমি চিন্তা করলাম তুমি কিসে আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ?

ঈসা (আ.) আমাকে বললেন,হ্যাঁ আল্লাহ তোমার জন্য যে স্থান নির্ধারণ করেছেন তা অতিত্রুম করেছ। আল্লাহ তোমার উপর রাগান্বিত হয়েছেন। সে তার ভ্রান্ত চিন্তাধারা এবং আত্ম অহংকারের জন্য তওবা করল। তখন সে প্রথমবারের মত ঈসা (আ.) এর সাথে সাগরের উপর দিয়ে পথ চলতে লাগল।১৬

১৭. শয়তানের পলায়ন : নবী (সা.) বর্ণনা করেছন,যখনই বান্দা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম তেলাওয়াত করে শয়তান তার নিকট থেকে পলায়ন করে।১৭

১৮. ফেরেশতার সহযাত্রী নাকি শয়তানের : রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত,

“إِذَا رَكِبَ رَجُلٌ الدَّابَّةَ فَسَمَّى رَدِفَهُ مَلَكٌ يَحْفَظُهُ حَتَّى يَنْزِلَ وَ مَنْ رَكِبَ وَ لَمْ يُسَمِّ رَدِفَهُ شَيْطَانٌ فَيَقُولُ تَغَنَّ فَإِنْ قَالَ لَا أُحْسِنُ قَالَ لَهُ تَمَنَّ فَلَا يَزَالُ يَتَمَنَّى حَتَّى يَنْزِلَ.”

যখন কোন মানুষ আল্লাহর নাম নিয়ে কোন বাহনের উপর আরোহণ করে তখন ফেরেশতাও তার পেছনে আরোহণ করেন এবং বাহন থেকে নামা পর্যন্ত তার রক্ষণাবেক্ষণ করেন। আর যদি আরোহণ করার সময় আল্লাহর নাম না নেয়,শয়তান তার পেছনে আরোহী হয় এবং তাকে বলে গান গাও। আর যদি বলে আমি জানিনা,তখন বলে কামনা কর। তখন সে বাহন থেকে নামা পর্যন্ত অব্যাহত ভাবে কামনা করতে থাকে।১৮

১৯. বেহেশতের লাইসেন্স : নবী (সা.) থেকে বর্ণিত- বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর লাইসেন্স ব্যতিত কেউ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। এভাবে“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য লেখা থাকবে। তিনি বলবেন: তাকে বেহেশতের উচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত কর,যেনো ফল-ফলাদির ডালপালাসমূহ ঝুলন্ত, বেহেশতবাসির নিকটবর্তী এবং হাতের নাগালের মধ্যে থাকে।১৯

২০. উনিশ রকমের অগ্নিশিখা থেকে মুক্তি : আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ থেকে বর্ণিত – যে কোন ব্যক্তি দোযখের ১৯ রকমের অগ্নিশিখা থেকে মুক্তি পেতে চায় ,অবশ্যই যেন‘ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’বলে। কেননা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর মধ্যে ১৯ টি অক্ষর আছে। আল্লাহ তা’ আলা প্রতিটি অক্ষরকে ঐ অগ্নিশিখা সমূহের প্রতিটির জন্য ঢাল স্বরূপ স্থাপন করেছেন।২০

২১. পৃথিবীতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর নিরাপত্তা : ইমাম আলী (আ.) থেকে বর্ণিত-“ যখন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”নবী (সা.) এর উপর অবতীর্ণ হয়,নবী (সা.) বলেছেন-  প্রথমবার যখন এই আয়াত হযরত আদম(আ.)এর উপর অবতীর্ণ হল তিনি বলেছিলেন যতদিন পর্যন্ত আমার সন্তানেরা এই আয়াত তেলাওয়াত করবে তারা আল্লাহর আযাব থেকে নিরাপদ থাকবে”।

২২. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর ওসিলায় পানি অতিক্রম : জনাব সৈয়দ শাফী বরূজেদ্দী তার‘ রওজাতুল বাহিয়্যাহ’গ্রন্থে  লিখেছেন: সৈয়দ মুর্তাজা আলামুল হুদার প্রতি আস্থাশীল ব্যক্তিদের বলেছেন যে, তার বাসা পুরান বাগদাদে ছিল এবং তার একজন ছাত্রের বাসা ছিল নতুন বাগদাদে। পথের দূরত্বের কারণে সে সৈয়দের ক্লাসে ঠিকমত অংশগ্রহন করতে পারত না। কেননা সকালে সেতু পার হতে হতে সৈয়দের ক্লাস শেষ হয়ে যেত অথবা ক্লাসের কিছু অংশ অতিবাহিত হয়ে যেত। অত:পর ছাত্রটি সৈয়দের নিকট ব্যপারটি খুলে বলল এবং আবেদন জানাল ক্লাস দেরীতে শুরু করার জন্যে । সৈয়দ মুর্তজা একটি দোয়া লিখে বললেন- এই দোয়াটি  সব সময় তোমার সাথে রেখো যখনই এসে দেখবে সেতু পারাপারের জন্যে প্রস্তুত হয়নি,তখন পানির উপর দিয়ে চলতে শুরু কর এবং এ পাশে চলে এসো,ভয় পেওনা ডুবে যাবেনা! কিন্ত এই দোয়া কখনো খুলবেনা এবং তার ভিতরে কি আছে দেখবে না। অত:পর ছাত্রটি কিছুদিন সেই নির্দেশ মোতাবেক আসছিল তাকে সেতু পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে হত না।সে পানির উপর দিয়ে হেটে যাচ্ছিল অথচ তার পা পানিতে ডুবছিল না এবং সময়মত ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছিল। একদিন সে ভাবল এটা কি এমন দোয়া যে,এতোটাই অলৌকিক? কাগজটা খুলে ফেলল দেখতে পেল লেখা আছে“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”। পুনরায় দোয়াটা মুড়িয়ে নিজের সাথে রেখে দিল। এরপর সে পূর্বের দিন গুলোর ন্যয় পানি অতিক্রম করে যেতে চাইল,কিন্ত তার পা পানিতে রাখা মাত্রই ডুবে যেতে লাগল। সে তার পা পিছনে সরিয়ে নিল। দেখল সে আর পানির উপর দিয়ে পথ চলতে পারছে না।২১

২৩. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর শিক্ষা ( শিখিয়ে দেওয়া) : শেখ মুর্তজা আনসারীর একজন ছাত্র বর্ণনা করেছেন- যখন শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক স্তর শেষ করে উচ্চ শিক্ষার্থে পবিত্র নাজাফে গেলাম। তখন শেখের শিক্ষা সভায় উপস্থিত হতাম,তার পাঠের বিষয়বস্তু কিছুই বুঝতে পারতাম না এমন পরিস্থিতিতে খুবই মর্মাহত হলাম। এমতাবস্থায় হযরত আলী (আ.)এর শরণাপন্ন হলাম। রাতে স্বপ্নে হযরতের খেদমতে উপস্থিত হলাম,হযরত আলী (আ.)“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”আয়াতটি আমার কানে তেলাওয়াত করলেন। সকালে যখন শেখের শিক্ষা সভায় উপস্থিত হলাম,তার (দারস)পাঠ দান বুঝতে পারছিলাম। আস্তে আস্তে আমার উন্নতি হতে লাগল। ক‘ দিন পর এমন অবস্থা হল যে,আমি ঐ শিক্ষা সভায় উপস্থিত হয়ে (বিভিন্ন বিষয়ে)আলোচনা করতাম। একদিন মিম্বারের নিচে থেকে শেখের সাথে অনেক বিষয়ে আলোচনা করলাম এবং সমস্যা তুলে ধরলাম। ঐ দিন পাঠ শেষে শেখ আনসারীর খেদমতে পৌঁছলাম। তিনি আমার কানে আস্তে করে বললেন! যিনি তোমার কানে“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”তেলাওয়াত করেছেন তিনি আমার কানে“ওয়ালাদ-দ্বোয়াল্লিন”পর্যন্ত তেলাওয়াত করেছেন। এটা বলেই তিনি চলে গেলেন। আমি এই ঘটনায় অত্যন্ত আশ্চার্যান্বিত হলাম। বুঝতে পারলাম যে,শেখের অনেক কেরামত রয়েছে,কেননা এ পর্যন্ত  কারো কাছেই এ বিষয়টি ব্যক্ত করিনি ।২২

২৪. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর জন্য শয়তানের ভোগান্তি:- একদিন নবী (সা.) পথ অতিক্রম করছিলেন,পথিমধ্যে তিনি দেখতে পেলেন যে,শয়তান অত্যন্ত জীর্ণ শীর্ণ ও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করলেন তোমার এ অবস্থা কেন ? বলল: হে আল্লাহর রাসূল আপনার উম্মতের কারণে অনেক কষ্ট ভোগ করছি এবং অত্যন্ত চাপের মধ্যে আছি। নবী (সা.) বললেন: আমার উম্মত তোমার সাথে কি করেছে ? বলল- হে আল্লাহর রাসূল আপনার উম্মতের ছয়টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যে বৈশিষ্টগুলো দেখা বা সহ্য করার মত শক্তি আমার নেই। প্রথমত : যখনই পরস্পর মিলিত হয় সালাম করে। দ্বিতীয়ত: একে অপরের সাথে করমর্দন করে। তৃতীয়ত: যে কোন কাজ করতে চাইলে‘ ইনশা আল্লাহ’বলে। চতুর্থত: গুনাহ সমূহের জন্য তওবা করে । পঞ্চমত: আপনার নাম শোনামাত্র  দরুদ পাঠ করে। ষষ্ঠত: যে কোন কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে।২৩

২৫. বিসমিল্লাহ এর প্রতি নূহ(আ.)এর শরণাপন্ন হওয়া : হযরত নূহ(আ.)ঐ ভয়ানক ও কঠিন তুফানে নৌকায় আরোহণের সময়,প্রবল স্রোতের যার প্রতিটি মূহুর্ত ছিল চরম বিপদ জনক। এবং নৌকা থামার সময়ও মুখে বিসমিল্লাহ বলেছিলেন।২৪

২৬. সেতু পারাপারের সময় বিসমিল্লাহ বলা : ইমাম সাদেক (আ.) থেকে বর্ণিত,

“انّ على ذروة كل جسر شيطاناً، فاذا انتهيت اليه، فقل: بسم الله يرحل عنك”

প্রতিটি সেতুর উপরেই শয়তান থাকে। যখন সেতুর নিকট পৌঁছাবে বলবে,বিসমিল্লাহ যেন শয়তান তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়।২৫

২৭. দস্তরখানায় ফেরেশতা : ইমাম সাদেক (আ.) রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন – যখন খাবারের জন্য দস্তরখানা বিছানো হয় তখন চার হাজার ফেরেশতা তার আশে পাশে সমবেত হয়। যদি বান্দা বিসমিল্লাহ বলে,ফেরেশতারা বলে : আল্লাহ তোমাদের উপর এবং তোমাদের খাবারে বরকত দান করুক। এবং শয়তানকে সম্বোধন করে বলে যে,এই ফাসেক দূর হও। এদের উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব নেই। আর যদি বিসমিল্লাহ না বলা হয়, তখন ফেরেশতারা শয়তানকে বলে এই ফাসেক এসো এবং এদের সাথে খাবার খাও।

খাবারের পর যখন দস্তরখানা উঠানো হয় এবং আল্লাহকে স্মরণ না করা হয়,ফেরেশতারা বলে : মানুষকে আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন আর তারা তাদের প্রভূকে ভূলে গেছে।২৬

২৮. সুন্দর করে লিপিবদ্ধ করা : রাসূল (সা.) বলেছেন –

“من كتب بسم الله الرحمن الرحيم فجوّده تعظيماً غفر الله له”

যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তা’ আলার সন্মানার্থে“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”সুন্দর করে লিখল আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিল।২৭

২৯. আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা : মানুষ অবশ্যই তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে। কাজ ছোট হোক আথবা বড় হোক। বিসমিল্লাহ এর অনুগ্রহে আমাদের আমলসমূহ পবিত্রতা লাভ করবে। প্রত্যেকটি কাজে বিসমিল্লাহ বলার ফলাফল অবশ্যম্ভাবী।

ইমাম হাসান আসকারী (আ.) থেকে বর্ণিত :

“بسم الله اى استعين على امورى كلها بالله”

বিসমিল্লাহ বলার অর্থ প্রতিটি কাজে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা।২৮

৩০.দুঃখ শোক দূরীভূত করে : আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন  -যে ব্যক্তি কোন কারণে দুঃখ পেয়ে নিষ্ঠার সাথে“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”বলে এবং একাগ্রচিত্তে  আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়,সে নিম্নের দুটোর মধ্যে যে কোন একটি ফলাফল লাভ করবে।

(১) তার পার্থিব চাহিদাগুলো মিটবে।

(২) অথবা তার চাহিদাগুলো আল্লাহর নিকট সঞ্চিত থাকবে। আর এটা স্পষ্ট যে,যা কিছু আল্লাহর নিকট আছে তা সর্বোত্তম এবং চিরস্থায়ী।২৯

৩১.সূরা বারাআতের প্রথমে বিসমিল্লাহ উল্লেখ না করার কারণ : আলী (আ.) বলেছেন –

“لم تنزل بسم الله الرحمن الرحيم على رأس سورة برائة لأنّ بسم الله للأمان و الرحمة و نزلت برائة لرفع الامان و السيف فيه”

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”সূরা বারাআতের প্রথমে আবতীর্ণ হয়নি। কেননা বিসমিল্লাহ নিরাপত্তা এবং রহমতের জন্য। আর সূরা বারাআত নিরাপত্তা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য (অঙ্গিকার ভঙ্গকারী কাফেরদের থেকে) অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর মধ্যে তরবারী (জিহাদ) নিহিত আছে।৩০

৩২.জাহান্নামের আগুন দূরীভূত হওয়া : রাসূলে আকরাম (সা.) বলেছেন,কিয়ামতের দিন আল্লাহর কিছু বান্দাদের আদেশ করা হবে,দোযখের আগুনে প্রবিষ্ঠ হও। যখন তারা জাহান্নামের নিকটবর্তী হয়ে“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”বলে পা দোযখে রাখবে,দোযখের আগুন সত্তর হাজার বছরের পথের সমান তার থেকে দূরে সরে যাবে।৩১

৩৩.বেহেশতের দরজায় বিসমিল্লাহ :  আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন –

“لمّا اسرى بى الى السّماء رأيت على باب الجنة… بسم الله الرحمن الرحيم الصدقة بعشرة”

মেরাজের রাত্রিতে আমি বেহেশতের দরজার উপর দেখলাম লেখা রয়েছে“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সদকার চেযে দশগুন বেশী পুরুস্কারের সমান।

৩৪.পাপ সমূহ নিশ্চিহ্ন হওয়া : কিয়ামতের দিন বান্দাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে এবং  পাপপূর্ণ আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে। আমলনামা নেবার সময় পৃথিবীতে কর্মসমূহ সম্পাদনের অভ্যাস অনুযায়ী যখন সে বিসমিল্লাহ বলে আমলনামা হাতে নেবে তখন সেটাকে সাদা দেখতে পাবে যেন তার পাপসমূহের কিছুই তাতে লেখা হয়নি।

সে বলবে : এখানে কিছু লেখা নেই যে পড়ব।

ফেরেশতারা বলবে :এই আমলনামার পূরোটাতেই তোমার পাপাচার ও খারাপ কাজসমূহ লেখা ছিল। কিন্ত“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”বলার বরকতে,তোমার পাপসমূহ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং পরম করুণাময় আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।৩২

৩৫.সর্বোত্তম পুরুস্কার : নবী (সা.) বলেছেন – যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম তেলাওয়াত করবে,তার প্রতিটি অক্ষরের বিনিময়ে চার হাজার পূণ্য লেখা হবে এবং হাজার গুনাহ বিনষ্ট করে ফেলা হবে। আর তাকে মর্যাদার চার হাজার স্তর উপরে নিয়ে যাওয়া হবে।৩৩

৩৬.আল্লাহর নামের মহত্ম : নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণিত যদি কেউ“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”লিখিত কোন কাগজ আল্লাহ এবং তার পবিত্র নামের সন্মানার্থে,মাটি থেকে তুলে নেয়, আল্লাহর নিকট সে সত্যবাদীদের শ্রেণীভূক্ত হিসেবে গণ্য হবে এবং তার পিতা মাতার গুনাহসমূহ  হ্রাস করে দেয়া হবে যদিও সে মুশরেক হয়।৩৪

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর তাফসীর

৩৭.বিসমিল্লাহ এর অর্থ : আলী বিন হোসাইন (আ.) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেছেন আমার পিতা তার ভাইয়ের নিকট থেকে,তিনি আমিরুল মু‘ মেনিন (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন: এক ব্যক্তি  বলল হে আমিরুল মুমিনীন! বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সম্পর্কে আমাকে অবগত করুন! এর অর্থ কি ? তিনি বললেন নিশ্চয় যখন আল্লাহর নাম( الله ) মুখে উচ্চারন করলে,আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে সবচেয়ে মহান এবং মহৎ নাম বললে! এবং এটা এমন একটা নাম যা দ্বারা আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে নামকরন করা উচিৎ নয় কোন সৃষ্টিকেই এই নামে ডাকা হয় না।৩৫

৩৮.বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের তাফসীর : হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.)‘ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’এর তাফসীরে বলেছেন- তিনিই আল্লাহ যার দিকে সমস্ত মাখলুকাত বিভিন্ন সমস্যা ও কঠিন বিপদ,হতাশা এবং একাকীত্বের মূহুর্তে ধাবিত হয়। তার প্রার্থনায় সুর তুলে বলে“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”অর্থাৎ আমার সমস্ত বিষয়াদী এবং কাজকর্মে একমাত্র আল্লাহর নিকট সাহায্য ও সহযোগীতা কামনা করছি যিনি ইবাদত এবং প্রার্থনার উপযুক্ত। আল্লাহ অবশ্যই তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবেন এবং তাকে উদ্ধার করবেন। পবিত্র সত্তাকে যখন (সত্যিকার অর্থে) ডাকা হয় তখন তিনি সারা দেন।৩৬

৩৯.আল্লাহর নিদর্শন : আলী বিন হাসান বিন ফাজ্জাল তার পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন-ইমাম রেজার নিকট‘ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’এর তাফসীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন: বান্দা যখন বলে‘ বিসমিল্লাহ’তার অর্থ হল যে,আল্লাহ তা’ আলার গুনবাচক নামসমুহের মধ্যে যে নাম উচ্চারণ করা ইবাদত তা উচ্চারণ করেছি। আমার পিতা বলল-জিজ্ঞেস করলাম সিমাহ কি?

উওর দিলেন; অর্থাৎ নিদর্শন,চিহ্ন ও প্রতীক।৩৭

৪০.হযরত আলী(আ.)এর ভাষায় “ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ” এর তাফসীর : আব্দুল্লাহ বিন ইয়াহিয়া জিজ্ঞেস করলো: হে আমিরুল মু’মেনীন!“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”এর তাফসীর কি ?

বললেন : যখনই বান্দা কোন কিছু পড়তে অথবা কোন কার্য সম্পাদনের মনস্থ করে। তখনি বলা উচিত :“ বিসমিল্লাহ”আর্থাৎ“ এই নামের ওসিলায় আমি কার্য সম্পাদন করছি”। সুতরাং বান্দা  যে কাজই করুক,তা যেন“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”দিয়ে শুরু করে। অবশ্যই  তাতে বরকত ও পূন্য নিহিত রয়েছে।৩৮

বিভিন্ন সময়ে বিসমিল্লাহ

৪১.বাহনে আরোহণ করার সময় “ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ” :আল্লাহর রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত :

“اذا ركب الرّجل الدّابّة و سمّى ردفه ملك يحفظه حتى ينزل”

যখন কোন ব্যক্তি বাহনে আরোহণ করার সময় আল্লাহর নাম নেয়,তখন তার সাথে ফেরেশতাও আরোহণ করে এবং অবতরণ করা পর্যন্ত (যে কোন দূর্ঘটনা থেকে) তার রক্ষণাবেক্ষণ করে।৩৯

৪২.বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম উলঙ্গ হওয়ার সময় : আমিরুল মু’ মেনীন (আ.) থেকে বর্ণিত:

“اذا تكشّف  أحدكم لبولٍ او غير ذلك فليقل بسم الله، فإنّ الشيطان يغضّ بصره عنه حتى يفرغ”

যখন তোমাদের কেউ প্রাকৃতিক কর্ম সারার জন্য অথবা অন্য কোন কারনে উলঙ্গ হয় তখন সে যেন“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”বলে। কেননা এর মাধ্যমে সে তার কাজ শেষ না করা পর্যন্ত শয়তানের দৃষ্টিকে দূরে সরিয়ে রাখে। (শয়তানের দৃষ্টি থেকে নিরাপদে থাকে)৪০

৪৩.শ্বাস প্রশ্বাসে তাসবীহ : আল্লাহর রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত:

“اذا قال العبد عند منامه بسم الله الرحمن الرحيم يقول ملائكتى اكتبوا نفسه الى الصباح”

যদি বান্দা ঘুমানোর সময়“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”বলে আল্লাহ তা’ আলা বলেন: হে আমার ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তার শ্বাস-প্রশ্বাস সমূহ লিপিবদ্ধ কর।৪১

৪৪.বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম অযু অবস্থায় : ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত

“من توضّأ فذكر اسم الله طهر جميع جسده “

যে ব্যক্তি অযু করার সময় আল্লাহর নাম স্বরণ করে তার সমস্ত শরীর পবিত্র হয়ে যায়।৪২

৪৫.মসজিদে প্রবেশ করার সময় : ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন-

“اذا دخلت المسجد وانت تريد ان تجلس لا تدخله الاّ طاهرا و اذا دخلته  فستقبل القبلة ثم ادع الله وسله وسمّ حين تدخله واحمدالله وصلّ على النّبىّ صلّى الله عليه و اله”

যদি মসজিদে প্রবেশ করে বসার ইচ্ছা পোষন কর তাহলে পবিত্রতা ব্যতিত প্রবেশ করো না। আর যখন মসজিদে প্রবেশ কর কেবলামুখী হও,অত:পর আল্লাহকে ডাক এবং তার শরনাপন্ন হও, যখন মসজিদে প্রবেশ করবে আল্লাহর নাম নিবে এবং তার প্রশংসা করবে,আর নবী (সা.) এবং তার বংশধরের উপর দরুদ পাঠ করবে।৪৩

৪৬.আল্লাহর প্রথম নির্দেশ : কোন কাজের স্থায়িত্ব লাভ বা টেকসই হওয়া আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত।

এই কারণে মহান আল্লাহ তা’ আলা নবী (সা.) এর প্রতি ওহীকৃত প্রথম আয়াতেই নির্দেশ দিয়েছেন যে, ইসলামের তাবলীগের শুরুতে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যেন আল্লাহর নাম দিয়ে শুরু করেন।

“ إقرأ باسم ربّك “ পড় তোমার প্রভূর নামে।৪৪

৪৭.সময়মত জাগ্রত হওয়া : নবী (সা.) বলেছেন – কেউ যদি রাত জেগে ইবাদত করতে চায়, সে অবশ্যই যেন বিছানায় যওয়ার সময় বলে“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” অতপর বলবে হে আল্লাহ আমাকে আমার নফসের ধোকা থেকে রক্ষা করো,আমাকে তোমার স্মরণ থেকে বিমুখ রেখো না। আর আমাকে গাফিলদের আন্তর্ভূক্ত করোনা। আমি একটি নির্দিষ্ট সময়ে উঠতে চাই। নিশ্চয় আল্লাহ তা’ আলা তার জন্য ফেরেশতা নিয়োজিত করবেন যে তাকে ঠিক সময়ে জাগ্রত করবে।৪৫

বিসমিল্লাহর মাধ্যমে খাবরে বরকত

৪৮.খাদ্যের বরকত : হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত –

“اذا سمّى الله على اوّل طعام و حمد على آخره وغسلت الايدى قبله وبعده وكثرت الايدى عليه و كان من الحلال فقد تمّت بركته”

যখন খাবারের প্রথমে আল্লাহর নাম নেয়া হয় এবং শেষে প্রশংসা করা হয়,পূর্বে এবং পরে হস্ত দ্বয় ধৌত করা হয়,খাবারের দিকে সম্প্রসারিত হাত সমূহে বরকত দান করা হয় এবং হালাল পন্থায় খাদ্য সরবরাহ করা হয় আর বরকত সমূহ পরিপূর্ণ করা হয়।৪৬

৪৯.খাদ্যের হিসাব : আলী (আ.) বলেছেন –

“من ذكر اسم الله على الطعام لم يسأل عن نعيم ذالك الطّعام أبدا “

যে খাবারের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে,সেই খাবারের নেয়ামত সম্পর্কে কখনো সে জিজ্ঞাসীত হবে না।৪৭

৫০.খাবারের পূর্বে এবং পরে : নবী করিম (সা.) বলেছেন:“ এমন কোন ব্যক্তি নেই যে তার পরিবারবর্গকে একত্রিত করে দস্তরখানা বিছিয়ে দেয় এবং তাদেরকে খাওয়ার প্রথমে“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”এবং শেষে“ আল-হামদুলিল্লাহ”বলে দস্তরখানা উঠিয়ে ফেলে,অথচ আল্লাহর মাগফেরাতের (ক্ষমার) অন্তর্ভূক্ত হয় না।

আলী (আ.) বলেছেন : যখন খাবার খাবে প্রথমে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আল্লাহর শুকরিয়া করবে।৪৮

৫১ .দস্তরখানায় শয়তানের উপস্থিতি :

“سئل النّبىّ (ص) هل ياكل الشيطان مع اللانسان ؟ فقال: نعم! كلّ مائدة لم يذكر فيها بسم الله عليها ياكل معه الشيطان و يرفع الله البركة عنها؛”

নবী (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হল শয়তানও কি মানুষের সাথে খাবার খায় ?

উত্তরে বললেন- হ্যাঁ,যে দস্তরখানায় আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয় না সেখানে শয়তান উপস্থিত হয় এবং মানুষের সাথে খায় আর আল্লাহ তা’ আলা সে দস্তরখানা থেকে বরকত উঠিয়ে নেন।৪৯

৫২.বিসমিল্লাহ   খাওয়ার সময় : নবী (সা.) ইমাম আলী (আ.) কে বললেন

“ الله و اذا فرغت فقل الحمد لله؛ ياعلىّ اذا اكلت فقل بسم”

হে আলী যখন তুমি খাও বল“ বিসমিল্লাহ”এবং যখন খাওয়া শেষ কর বল“ আল হামদুলিল্লাহ” ।৫০

৫৩.বিসমিল্লাহ প্রতিটি কাজের শুরুতে : জনৈক্য ব্যক্তি ইমাম সাদেক (আ.) এর নিকট আরজ করল : আমি খেতে যন্ত্রণা অনুভব করি এবং কষ্ট পাই।

ইমাম সাদেক (আ.) বললেন:  কেন বিসমিল্লাহ  বল না ?

ঐ ব্যক্তি বলল : কেন ? বিসমিল্লাহ বলি তারপরও কষ্ট পাই।

ইমাম বললেন : যখন কথা বল তখনও কি বিসমিল্লাহ  বল ?

ঐ ব্যক্তি বলল  : না ।

ইমাম বললেন : এই কারণে যন্ত্রনা অনুভব কর এবং কষ্ট পাও। অত:পর বললেন- যখনই কথা বলা থেকে বিরত হবে এবং খাওয়া শুরু করবে বিসমিল্লাহ বলবে। উক্ত ইমাম থেকে বর্ণিত অন্য এক রেওয়ায়েতে এসেছে,যদি খাবারের কয়েকটা পাত্র হয় তবে প্রতিটি পাত্রের জন্য একবার বিসমিল্লাহ  বলবে।

রাবী জিজ্ঞেস করল যদি ভূলে যাই তাহলে কি করব ?

ইমাম বললেন : বল “بسم الله علي اوله وآخره ”  অর্থাৎ শুরুতে এবং শেষে বিসমিল্লাহ।

নিষ্পাপ ব্যক্তিদের কর্মপদ্ধতি

৫৪.বিসমিল্লাহ   পানি পান করার পূর্বে :

“وعن النّبى (ص) كان اذا شرب  بدء فسمّى”

নবী (সা) পানি পান করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলতেন।৫১

৫৫.বিসমিল্লাহ পানি পান করার সময় : আহমেদ বিন খালেদ বারকী থেকে বর্ণিত: ইমাম কাজেম (আ.) জমজমের পানি পান করার সময় বলেছেন“ বিসমিল্লাহ”আল্লাহর নামে এবং“ আল হামদুলিল্লাহ”“ আশ শুকর লিল্লাহ”সমস্ত প্রশংসা এবং গুনগান একমাত্র আল্লাহর।৫২

৫৬.পরিপাকে সমস্যা না হওয়া : ইমাম সাদেক (আ.) থেকে বর্ণিত :

“ما اتّخمت قطّ و ذلك انّى لم ابدا بطعام الاّ قلت بسم الله ولم افرغ من الطعام الاّ قلت الحمد لله؛”

তিনি বলেছেন কখনোই পরিপাকে আমার সমস্যা হয়নি,কেননা কখনোই আমি বিসমিল্লাহ না বলে খাওয়া শুরু করিনি এবং আল হামদুলিল্লাহ না বলে খাওয়া শেষ করিনি।৫৩

৫৭.তিন নিশ্বাসে পানি পান করা :

“كان رسول الله يتنفّس فى الاناء ثلاثة انفاس سمّى عند كلّ و يشكر الله فى آخرهن”

রাসূল (সা.) তিন নিশ্বাসে পানি পান করতেন এবং  প্রত্যেক নিশ্বাসের শুরুতে বিসমিল্লাহ আর শেষে শুকরিয়া করতেন। ৫৪

৫৮.নবীর সুন্নাত : ইমাম সাদেক (আ.) থেকে বর্ণিত :

“كان سول الله صلى الله عليه واله يجهر ببسم الله الرحمن الرحيم و يرفع صوته بها “

রাসূল (সা.) সর্বদা“ بسم الله الرحمن الرحيم ” প্রকাশ্য এবং উচ্চ স্বরে উচ্চারণ করতেন।৫৫

৫৯.আল্লাহর নবীর সীরাত : ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন :

” كان رسول الله (ص) اذا اراد يبعث سريّة دعاهم فأجلسهم بين يديه ثمّ يقول سيروا بسم الله و  بالله وفى سبيل الله و على ملة رسول الله”

রাসূল (সা.) যখনই কোন সৈন্যদল প্রেরণের মনস্থ করতেন তাদেরকে ডেকে সামনে বসাতেন এবং বলতেন তোমরা রওনা কর আল্লাহর নামে,আল্লাহর জন্য,আল্লাহর পথে এবং রাসূলের ধমের্র উপর।৫৬

বিসমিল্লাহর দ্বারা রোগ মুক্তি

৬০.জ্বর থেকে সুস্থ হয়ে উঠার জেকর : ইমাম আলী ইবনে মুসা আর রেজা (আ.) থেকে বর্ণিত  রেওয়ায়েতে এসেছে যে,জ্বর থেকে সুস্থতা লাভ করার জন্য তিন টুকরো কাগজে লিখ-

“بسم الله الرحمن الرحيم لا تخف إنّك انت الاعلى”

“بسم الله الرحمن الرحيم لا تخف نجوت من القوم الظالمين”

“بسم الله الرحمن الرحيم الاله الخلق و الامر تبارك الله ربّ العالمين”

অত:পর প্রতি টুকরোয় তিনবার সুরা তাওহীদ পড়ে তিন দিনে প্রতিদিন এক টুকরো কাগজ গিলে ফেল। ইনশাআল্লাহ আরোগ্য লাভ করবে।৫৭

৬১.হযরত ফাতেমার তাসবীহ : হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) বলেছেন: হে সালমান! যদি আল্লাহর সাক্ষাত পেতে চাও এমতাবস্থায় যে তিনি তোমার প্রতি সন্তুষ্টি রয়েছেন এবং যদি চাও যতদিন বেঁচে আছ জ্বর তোমাকে যেন আক্রান্ত না করতে পারে তাহলে প্রতিদিন এই দোয়ার উপর পাঠ করো।

” بسم الله الرحمن الرحيم، بسم الله النّور، بسم الله نور النّور، بسم الله نور على النّور، بسم الله الذى هو مدبّر الامور، بسم الله الذى خلق النّور من النّور، الحمد لله الذى خلق النّور من النّور، و انزل النّور على الطّور فى كتاب المسطور،  فى رقّ  منشور بقدر مقدور، على نبىّ محبور، الحمد لله الذى هو بالعزّ مذكور، و بالفخر مشهور، وعلى السّرّاء والضرّاء مشكور، و صلى الله على سيّدنا محمّد و آله الطّاهرين؛”

পরম করুণাময় আল্লাহর নামে,আল্লাহর নামে যিনি জগতের আলো;আল্লাহর নামে যিনি জগতের আলো সমূহের আলো,আল্লাহর নামে যিনি আলোর উপরে আলো,আল্লাহর নামে যিনি জগতের পরিচালক,আল্লাহর নামে যিনি আলো থেকে আলো সৃষ্টি করেছেন,সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আলো থেকে আলো সৃষ্টি করেছেন। পাহাড়ের উপরে লিপিবদ্ধ কিতাবে নূর (আলে) অবতীর্ণ করেছেন,প্রকাশিত পুস্তিকায় পূর্ব নির্ধারীত পরিমাণ মোতাবেক প্রিয় নবীর উপর। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি মান সম্মানে উল্লেখযোগ্য এবং বদান্যতায় প্রসিদ্ধ। সুখে এবং দু:খে প্রশংসনীয়। আমাদের নেতা মোহাম্মদ (সা.) এবং তার পূত পবিত্র বংশধরদের উপর শান্তি বর্ষণ কর।

সালমান বলেছেন:“ যে দিন থেকে এ দোয়া শিখেছি,মক্কা ও মদীনা বাসীর এক হাজারেরও বেশী মানুষকে এ দোয়া শিক্ষা দিয়েছি। কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে,যখনই কেউ এই দোয়া পড়ে,মহান আল্লাহ তা’ আলার নির্দেশে জ্বর তার থেকে দূরে পালিয়ে যায়।৫৮

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর ফলাফল

৬২.প্রত্যেকটি কাজ আল্লাহর নামে শুরু : নবী করিম (সা.) বলেছেন,যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যদি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দ্বারা শুরু না করা হয়,ঐ কাজ অপূর্ণাঙ্গ ও অসমাপ্ত থেকে যায়।৫৯

৬৩.অসমাপ্ত কাজ : আল্লাহর রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত –

” كلّ أمر ذى بال لم يذكر فيه بسم الله فهو ابتر”

যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে আল্লাহর নাম স্মরণ না করা হলে তা ত্রুটিপূর্ণ থেকে যায়।৬০

৬৪.আল্লাহর নাম বর্জন করো না :  ইমাম সাদেক (আ.) বর্ণনা করেছেন –

” لا تدع البسملة و لو كتبت سعرا ؛”

বিসমিল্লাহ লেখা থেকে বিরত থেকো না,যদিও একটি কবিতা লেখ।৬১

৬৫.আল্লাহর নাম বর্জন করার আপদ : আব্দুল্লাহ বিন ইয়াহিয়া আমিরুল মু‘ মিনীন (আ.) এর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। একদিন তিনি আলী (আ.) এর খেদমতে এসে বিসমিল্লাহ না বলেই সেখানে রাখা একটি চেয়ারে বসে পড়লেন হঠাৎ করে তার শরীর বিচ্যুত হয়ে মাটিতে পড়ে গেল এবং মাথা ফেটে গেল। আলী (আ.) তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তার ক্ষত আরোগ্য লাভ করলে। আলী (আ.) বলেন : তুমি জান না নবী (সা.)  আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য হাদিস বর্ণনা করেছেন যে,যে কাজ আল্লাহর নাম ছাড়া শুরু করা হয় তা অসমাপ্ত থেকে যায়। বললাম আমার পিতা ও মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হউক। আমি জানি এরপর আর ত্যাগ করব না। আলী (আ.) বললেন: এই ভাবে লাভবান এবং উপকৃত হবে।

ইমাম সাদেক(আ.)এই হাদীস বর্ণনা করার পর বললেন, সচরাচরই আমাদের কিছু সংখ্যক অনুসারী তাদের কাজের প্রারম্ভে আল্লাহর নাম স্মরণ করে না। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সন্মুখীন করেন যেন তারা জাগ্রত হয়।৬২

৬৬. আল্লাহর নামে জবাই করা : ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন –

“من لم يسمّ اذا ذبح فلا تأكله “

যদি জবাই করার  সময় আল্লাহর নাম না নেয়া হয় তবে তা (জবাইকৃত পশু) ভক্ষন করনা।৬৩

৬৭.শয়তানের দল ভূক্ত : আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন-

” اذا ركب العبد الدّابّة فلم يذكر اسم الله ردفه الشيطان “

যদি বান্দা বাহনে আরোহণ করার সময় বিসমিল্লাহ না বলে তবে সে শয়তানের দলভূক্ত হয়ে যায়।৬৪

৬৮.আল্লাহর নাম বর্জন নামাজ বর্জনের মতই : ইমাম নাকী (আ.) বলেছেন-

” لو قلت إنّ تارك التسمية كتارك الصلاة لكنت صادقا ؛ “

যদি বলি নিশ্চয় তাসমিয়াহ (বিসমিল্লাহ) ত্যাগ কারী নামাজ ত্যাগকারীর মত তবে সত্যই বলেছি।৬৫

৬৯.শয়তানের আধিপত্য করা : মোটা শয়তানের সাথে চিকন শয়তানের সাক্ষাতে যে, আলাপচারিতা হয় তা নিম্ন রূপ:

মোটা শয়তান : তুমি কেন এত দূর্বল ও চিকন হয়ে পড়েছ?

চিকন শয়তান : আমি জনৈক ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করতে চাই। কিন্তু সে প্রতিটি কাজের শুরুতে যেমন : খাওয়া- দাওয়া,পান করা,সহবাস ইত্যাদির পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে। এর ফলে আমি তার উপর প্রভাব ফেলতে,তার কাজ সমূহের অংশীদার হতে বঞ্চিত হই। এটাই আমার চিকন হওয়ার কারণ।

কিন্তু তুমি বল দেখি তুমি কেন এত মোটা ?

মোটা শয়তান : আমি এই কারণে মোটা যে,আমি সুখে আছি। কেননা আমি এমন এক গাফেল ও উদাসীন ব্যক্তির উপর কর্তৃত্ব করি,যে কোন কাজেই বিসমিল্লাহ বলে না,বাড়িতে প্রবেশ করার সময়,বের হওয়ার সময়,খাওয়া দাওয়া,পান করা,সহবাস ইত্যাদি কোন কাজেই সে বিসমিল্লাহ বলে না। সে এমনই উদাসীন ও ব্যস্ত যে,আল্লাহর কথা তার মনেই থাকেনা। এ কারণে আমি মোটা।

 

আপনার ইমেইল প্রদর্শন করা হবে না।