স্বাস্থ্য – চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ইসলাম

0 ৮৭

 

 

 

 

 

স্বাস্থ্য (Health):
স্বাস্থ্য মানুষের অমুল্য সম্পদ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তারঁরই ইবাদত করার জন্য । তাই যথাযথভাবে ইবাদত করার জন্য দরকার   শারীরীক , মানসিক ও আত্মিক সুস্থতা। একজন  মুমিনের জন্য মহান রবের দেওয়া এই সুস্বাস্থ্য অন্যতম একটি আমানত।  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
اِنّ النَّاسَ لَمْ يُعطُوْا شَيْىئًا اَفْضَلُ مِنَ العَفْوَ وَالْعَافِيَةِ
“ নিশ্চয়ই মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্হতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন নি’আমত দান করা হয়নি।”
(সুনান নাসায়ী, হাদিস ও সামাজিক বিজ্ঞান পৃষ্টা-৯১)
স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে দুনিয়ার সকল সুখ ও সৌন্দর্য মিথ্যা হয়ে যায়।  এমনকি ইবাদত- বন্দেগীও ভাল করে করা যায় না। তাই স্বাস্থ্য বিজ্ঞান নিয়ে জ্ঞানার্জন করা  সকলের জন্য প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মুল কথা হলো রোগ  প্রতিরোধ বা রোগ থেকে সু-রক্ষা থাকার জ্ঞান। রোগ হলে চিকিৎসা করা হবে শুধু এরুপ  ধারণা ভুল; বরং  রোগ হতে না দেয়ার প্রচেষ্টাই প্রধান কর্তব্য।
ইসলাম এবিষয়ের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুল (স.) স্বাস্থ্য সুরক্ষারে মৌল বিধি-বিধান সম্পর্কে অত্যন্ত সুষ্পষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি স্বাস্থের জন্য সহায়ক ও উপকারী বস্তুসমূহ এবং সে সকল বিষয়েও চিহ্নিত করে দিয়েছেন যা স্বাস্থ্য অটুট রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞান: (Medical Science)
যে বিজ্ঞানের মাধ্যমে রোগ –ব্যাধির চিকিৎসা করা হয়, তাকেই চিকিৎসা বিজ্ঞান বা Medical Science বলা হয়। রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধেই উত্তম ব্যবস্থা। তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগ প্রতিরোধের উত্তম ব্যবস্থাপত্র দিয়ে গেছেন। আর এটাই ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আসল চিকিৎসা। অবশ্যই রোগ হলে তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি ইরশাদ করেছেনঃ    مَا انْزَلَ اللهُ دَاءً اِلَّا َنْزَلَ لَهٗ شِفَاءُ
“মহান আল্লাহ তায়ালা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ পাঠাননি”।  [2]   সহিহ বোখারী , মিশকাত,পৃষ্টা-৩৮৭
তিনি আরো ইরশাদ : لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءُ فَاِذَا اَصَبَ الدَّاءُ بَرِأَ بِاِذْنٍ اللهِ
প্রত্যেক রোগরেই ঔষধ রয়েছে, যখন রোগের সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করা হয় তখন রোগী আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাময় হয়ে যায়।                                                                                                   সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৭৮।
এর দ্বারা প্রমানিত হয়, চিকিৎসা করাও রাসল (স.) এর সুন্নাত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চিকিৎসা পদ্ধতির বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় তাঁর অসংখ্যা হাদিসের মাধ্যমে।
সাস্থ্য বিধি:
সু-স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ইসলাম অনেক গুরুত্ত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিধি ও নির্দেশনা প্রদান করেছেন। যাহা গুরুত্বের সাথে মেনে চললে ও বাস্তবায়ন করলে রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত ফলদায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। স্বাস্থ্য বিধির মধ্যে রয়েছে ব্যাক্তিগত ও পরিবেশ পরিস্কার পচ্ছিন্নতা, স্যানিটেশন, বৃক্ষরোপন ইত্যাদি।
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা:
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের প্রথম কথাই হলো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা। এই ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, الطُّهُوْرُ شَطْرُ الْاِيْمَانِ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।   সহিহ মুসলিম, (বাংলা) ২য় খন্ড,হাদিস নং-৪৪১
পরিস্কার পিরিচ্ছন্নতা দু’প্রকার:
ক. ব্যাক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা।
খ. পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা।
১. ব্যাক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বলতে বুঝায়, যে সব কর্মসুচী ও কাজের মাধ্যমে মানুষ নিজে নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখতে পারে এবং  রোগ প্রতিরোধ হয়ে যায় । যেমন অযু, গোসল ও মিসওয়াক করা  এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধি সমুহ।
অযু:
মানুষ সুস্থ থাকার জন্য ব্যাক্তিগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থের সু-রক্ষা একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। যেহেতু আমাদের চারদিকে অসংখ্য রোগ-জীবাণু রয়েছে।  তাই রোগ-জীবানু থেকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমাদের হাত, মুখমন্ডল ও পা তথা সমগ্র শরীরকে  এসব রোগ-জীবানু  থেকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। হাত-পা ধোয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হলো অযু। মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন,
يٰااَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اِذَا قُمْتُمْ اَلَى الصَّلٰوةِ فَاغْسِلُوْا وٗجُوْهَكُم وَاَيْدِيَكُم اَلَ الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوسِكُمْ  وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنٍ
অর্থ:-  “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কুই পর্যন্ত ধৌত করবে, তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করবে। (সুরা মায়িদা : আয়াত-০৬)
এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
عن عثمان بن عفان رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من توضأ فاحسن الوضوء خرجت خطاياه من جسده حتى تخرج من تحت اظفاره
হযরত উসমান রা. থেকে বর্ণিত  হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : যে ব্যাক্তি অযু করে এবং তা উত্তম রূপে করে, তার দেহ থেকে সমুদয় গুনাহ সমুহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের ভিতর  থেকেও (গুনাহ) বের হয়ে যায়।
(সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২য় খন্ড, হাদিস নং -৪৮৫)
   মিসওয়াক করা:
মুখ ও দাঁত পরিস্কার করার উত্তম উপায় হলো “মিসওয়াক করা”। এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে
عن عائشة‍ رضي الله عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم قال  السواك مطهرة للفم و مرضاة للرب
অর্থ:-  হযরত আয়শা রা.. থেকে বর্ণিত  হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন “ মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা লাভের (ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার) উপায়  এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। সুনান নাসায়ী প্রাগুপ্ত, পরিচ্ছেদ: মিসওয়াকের গুরুত্ত্ব) পৃ.-৩
স্বাস্থ্য রক্ষা ও পরিস্কার –পরিচ্ছন্নতার দশটি মৌল বিধান:
এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে:-
عن عائشة‍ رضي الله عنها   قالت  قال رسول الله صلى الله عليه وسلم  عشرة من الفطرة  . قص الشارب و اعفاء اللحية السواك استنشاك الماء و قص الاظفار و غسل ابرجم و نتف الابط و خلق العانة  وانتقاص الماء  قال زكريا قال مصعب و نسيتُ العاشرةُ   الا اَنْ تكون المضمضة
অর্থ:-  হযরত আয়শা রা.. থেকে বর্ণিত  হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন “ দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। ১. গোঁপ খাটো করা, ২. দাঁড়ি লম্বা করা , ৩. মিসওয়াক করা, ৪. নাকে পানি দেওয়া, ৫.নখ কাটা, ৬. নাক-কানের ছিদ্র ধোয়া ও আঙ্গুলের ঘিরা সমুহ ধোয়া, ৭. বগলের পশম উপড়ে ফেলা, ৮. নাভির নিছে লোম মুক্ত করা, ৯. পানি দ্বারা ইসতিনজা করা, (হাদিসের রাবী মুস’আব বলেন দশম কাজটি আমি ভুলে গিয়েছি। সম্ভবত সেটি) ১০. কুলি করা।  (সুনান নাসায়ী প্রাগুপ্ত, পরিচ্ছেদ: মিসওয়াকের গুরুত্ত্ব) পৃ.-৩)
গোসল করা:
সুস্থ শরীর ও সুন্দর ও মনের জন্য পাক-পবিত্র থাকা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু নানা কাজে নানাভাবে শরীর ময়লা,অপবিত্র  ও জিবানুযুক্ত হয়ে যায় ।  তাই অস্বস্থি লাগে। এই ময়লা ও অপবিত্র দুর করা  এবং জিবানুমুক্ত  হওয়ার উত্তম উপায় হলো গোসল করা।
এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে  gdvMfl icWcY:-
عن عائشة‍ رضي الله عنها   قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم  اذا اغتسل من الجنابة   بدأ فغسل يديه ثم يتوضأ  للصلاة  ثم يدخل اصابعه  فى الماء  فيخَلَّلُ بها اصل شعره  ثم يصب  على رأسه ثلث غُرفات  بيده  ثم يُفِيضُ  الماء على جلده
অর্থ:-  হযরত আয়শা রা.. থেকে বর্ণিত  হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানাবাতের ( স্ত্রী সহবাস কিংবা অন্য যে কোন বীর্যপাতহেতু যে অপবিত্র অবস্থা সৃষ্টি হয় তাকে জানাবাত বলে) গোসল করতেন, তখন শুরু করেই তিনি প্রথম স্বীয় হাত ধৌত করতেন। অতঃপর সেভাবে অযু করতেন যেভাবে  নামাযের জন্য অযু করতেন, অতঃপর আঙ্গুলসমুহ পানিতে ডুবিয়ে তা দ্বারা চুলের গোড়া খিলাল করতেন। এরপর দু’হাত দ্বারা মাথার উপর তিন অঞ্জলী পানি ঢালতেন। এরপর সমস্ত শররে পানি প্রবাহিত করতেন। সহিহ বুখারী  ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১ম খন্ড,হাদিস নং -২৪৬ ।
২. পরিবেশের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা:
মানুষ সুস্থ থাকার জন্য ব্যাক্তিগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থের সু-রক্ষা  পাশাপাশি সামাজিক পরিবেশও  পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা  ও সচেতনতাও অত্যন্ত  প্রয়োজনীয় বিষয়। কারণ পরিবেশ দুষন মুক্ত না হলে শুধু ব্যাক্তিগত পরিচ্ছন্নতায় স্বাস্থ্য ও শরীর সঠিকভাবে গড়ে  তোলা যায় না।  তাই সুস্থ সুন্দর জীবন গঠন করতে হলে চাই সুন্দর পরিবেশ। পরিবেশ সুন্দর করার বিষয়ে ইসলাম অত্যন্ত গুরত্ত্ব প্রদান করেছেন। পরিবেশ যেন দূষিত না হয় সে ব্যাপারে চমৎকার দিক নির্দেশনা প্রদান করেন প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম।
স্যানিটেশন (Sanitation) পদ্ধতি:
সমাজ ও পরিবেশকে দূষনমুহক্ত  রাখতে যেটি প্রয়োজন যেখানে সেখানে মুল-মূত্র ত্যাগ না করে নির্দিষ্ট স্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করা। কেননা মুল-মূত্রের মাধ্যমেই সমাজে অধিকাংশ রোগ-জীবানু ছড়িয়ে পড়ে । পরিবেশ দূষিত হয়।  মানব মল  ও মুত্রের নিরাপদ নিস্কাশনে যথাযথ ব্যবস্থা এবং  সুবিধা প্রধান [10] Sanitation.Health topics,World Health Organization.তথা নির্দিষ্ট স্থানে পাকা বা আধা পাকা পায়খানা বা ওয়াশ ব্লক তৈয়ী করাকেই স্যানিটেশন (Sanitation) বলা হয়। সুত্র: ইউকিপিড়িয়া।

পরিবেশ সুরক্ষা রোগ –জীবানু থেকে রক্ষার জন্য মানব মল  ও মুত্রের নিরাপদ নিস্কাশনে যথাযথ ব্যবস্থার  শিক্ষা নিয়ে হাদিস শরীফে প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম এর আমল  বর্নিত হয়েছে ।
عن جابررضي الله عنه خرجنا مع  رسول الله صلى الله عليه وسلم فى سفر  وكان رسول الله  صلى الله عليه وسلم لا يأتى البراز حتى يتغيب فلا يرى
অর্থ:-  হযরত যাবের রা. বর্ণনা করেন, আমরা এক সময় কোন এক সফরে বের হলাম,  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম ইস্তিঞ্জার (মল ত্যাগের) জন্য বের হলে  এত দূর যেতেন যে, , তখন (লোকালয় হতে) তিনি এত দুরে যেতেন এবং তাঁকে দেখা যেত না। সুনানা ইবনে মাজাহ, ইসলামাকি ফাউন্ডেশন, ১ম খন্ড, হাদিস নং-৩৩৫।

হাদিস শরীফে অপর একটি রিওয়ায়েতে  প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম স্যানিটেশন (Sanitation) বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন।  বর্ণিত হয়েছে
عن جابررضي الله عنه قال  رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يبولنَّ احدكم فى الماء الراكد
অর্থ:-  হযরত জাবের রা. থেকে বর্নিত তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম ইরশাদ করেন “তোমাদের মধ্যে কেউ যেন স্থির পানিতে পেশাব না করে।” সুনান ইবনে মাজাহ, ইসলামাকি ফাউন্ডেশন, ১ম খন্ড, হাদিস নং-৩৪৪।
পায়খানা –পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করা:
মল-মুত্র যথাযথভাবে পবিত্রতা ও পরিস্কার-পরিচ্ছতা লাভের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম প্রয়োজনীয় কিছু জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। যা মানবজীবণে খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ । এ বিষয়ে হাদিস শরীফে বর্নিত হয়েছে
عن ابى هريرة رضي الله عنه قال  رسول الله صلى الله عليه وسلم انما انا لكم بمنزلة الوالد اعلمكم  فاذا اتى احدكم الغائط فلا يستقبل القبلة  ولا يستدبرها ولا يستطب بيمينه وكان يأمر بثلاثة احجار و ينهى عن الروْث والرمة
অর্থ:-  সাহাবী হযরত আবু  হুরাইরা রা. থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য পিতার সমতুল্য। আমি তোমাদেরকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা দিচ্ছি। তোমাদের কউ যখন পায়খানায় যাবে তখন যেন কিবলামুখী হয়ে এবং কিবলাকে পেছনে ফেলে  না বসে এবং  কেউ তার ডান হাত দিয়ে যেন ইসতিঞ্জা (শৌচক্রিয়া) না করে। আর ইসতিঞ্জায় (পবিত্রতা অর্জনে) তিনি যেন তিন খন্ড পাথর ( ঢিলা) ব্যবহার করার নির্দেশ দিতেন । এবং গোবর ও হাড় ব্যবহার  করতে নিষেধ করতেন। সুনান আবু দাউদ . ইসলামাকি ফাউন্ডেশন, ১ম খন্ড, হাদিস নং-৭ ও ৮।
ইসতিঞ্জায় (শৌচক্রিয়ায়) পানি ব্যবহার করা:
জীবানু মুক্ত হওয়া ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লামকে সবসময়  শৌচক্রিয়া করার সময় পানি ব্যবহার করতেন।
সুনানে ইবনে মাজাতে বর্ণিত আছে:-
عن عائشة رضي الله عنها قالت ما رأيتُ رسول الله صلى الله عليه وسلم خرج من غائط قَطٌّ  الا مس ماء
অর্থ:-  হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি,যখনই তিনি ইসতিঞ্জা করতেন, তখনই তিনি পানি ব্যবহার করতেন। সুনান ইবনে মাজাহ, ইসলামাকি ফাউন্ডেশন, ১ম খন্ড, হাদিস নং-৩৫৪।

মদিনার আনসারগণের মধ্যে কুফা বাসীরা (ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার করে ) পানি দিয়ে ইসতিঞ্জা করতেন , তাই তাঁদের প্রশংসায় স্বয়রং আল্লাহ তা‘য়ালা  পবিত্র কুরআনের আয়াত নাজিল করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন – فِىْةِ رِجَالٌ يُحِبُّوْن اَنْ يَتَطَهَّرُوْا وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ সেখানে এমন লোকও রয়েছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালেবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন। সুরা তাওবা , আয়াত-১০৮।

ইসতিঞ্জার (শৌচ ক্রিয়ার) পর হাতকে জীবানু মুক্ত করা:
শৌচক্রিয়া তথা পায়খানা-পশ্রাবের পর হাত কে যে কোন জীবানু নাশক বস্তু দিয়ে  জীবানু মুক্ত করা যেন পরবর্তিতে কোন রোগে আক্রান্ত না হয়। মাটি, সাবান বা যে কোন উপায়ে জীবানু মুক্ত করা যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম  শৌচক্রিয়ার পর মাটি দিয়ে জীবানু মুক্ত করতেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত:-
عن ابى هريرة رضي الله عنه ان النبى   صلى الله عليه وسلم قضى حاجته. ثم استنجى من ثور ثم دلك يده بالارض
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  পায়খানা –পশ্রাবের পর বদনার পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করতেন । অতঃপর তিনি তাঁর হাত মাটিতে গড়াতেন (ঘষতেন)। সুনান ইবনে মাজাহ, ইসলামাকি ফাউন্ডেশন, ১ম খন্ড, হাদিস নং-৩৫৮।
চলমান থাকবে 

লেখক পরিচিতি:
খতিব, গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ
সভাপতি, লংগদু উপজেলা ইমাম সমিতি,
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।

আপনার ইমেইল প্রদর্শন করা হবে না।