সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ইসলাম
ডেক্স রিপোর্টঃ ইসলামিক আলোচনা
ইসলাম সব ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। ধর্ম পালনে কেউ বাধাগ্রস্ত হবে না। তাই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ, উপাসনালয় ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে কোনোরূপ ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা থেকে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।
ভিন্ন ধর্মের পুজনীয় বস্তুকে নিয়ে ব্যঙ্গ- বিদ্রুপ করবেনা:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَسُبُّوا۟ ٱلَّذِینَ یَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَیَسُبُّوا۟ ٱللَّهَ عَدۡوَۢا بِغَیۡرِ عِلۡمࣲۗ كَذَ ٰلِكَ زَیَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمۡ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِم مَّرۡجِعُهُمۡ فَیُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ﴾ [الأنعام ١٠٨]
‘আল্লাহকে ছেড়ে যাদের তারা (মূর্তিপূজক) ডাকে, তাদের তোমরা গালি দিও না।তাহলে তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকেও গালি দেবে।’ (সুরা আনয়াম, আয়াত : ১০৮)
কোন অমুসলিম যেন জুলুমের শিকার না হয়:>
যেকোনো মুসলিম দেশে বসবাসকারী অমুসলিমদের নিরাপত্তার দায়িত্ব করা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কোনো অমুসলিম যেন কোনোভাবেই মুসলিমদের মাধ্যমে জুলুমের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,-
من ظلم مُعاهِدًا، أو انتقصه، أو كلَّفه فوق طاقتِه، أو أخذ منه شيئًا بغيرِ طِيبِ نفسِه، فأنا حجيجُه يومَ القيامةِ
‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর জুলুম করে, বা তার কোনো ক্ষতি করে, বা তার ওপর সাধ্যাতীত কোনো বিষয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়, অথবা তার সন্তুষ্টি ছাড়া কোনো কিছু ছিনিয়ে নেয়, কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে অমুসলিমের পক্ষে প্রতিবাদকারী হব।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩০৫১,৩০৫২)
জুলুমকারী জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না:>
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
مَن قَتَلَ مُعاهَدًا لَمْ يَرِحْ رائِحَةَ الجَنَّةِ، وإنَّ رِيحَها تُوجَدُ مِن مَسِيرَةِ أرْبَعِينَ عامًا.
الراوي: عبدالله بن عمرو • البخاري، صحيح البخاري (٣١٦٦) • [صحيح]
‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করল সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ ৪০ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১৬৬)
অমুসলিম লাশের প্রতি রাসুল স. এ-র উদার মনোভাব পোষণ:
মানুষের মধ্যকার বিরোধ অবধারিত হলেও সব মানুষের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ এবং মানবীয় আচরণ প্রদর্শন ইসলামের শিক্ষা। কারণ মানুষ হিসেবে সবাই সম্মানিত। হাদিসে এসেছে,
كانَ سَهْلُ بنُ حُنَيْفٍ، وقَيْسُ بنُ سَعْدٍ قاعِدَيْنِ بالقادِسِيَّةِ، فَمَرُّوا عليهما بجَنازَةٍ، فَقاما، فقِيلَ لهما إنَّها مِن أَهْلِ الأرْضِ أَيْ مِن أَهْلِ الذِّمَّةِ، فَقالا: إنَّ النبيَّ ﷺ مَرَّتْ به جِنازَةٌ فَقامَ، فقِيلَ له: إنَّها جِنازَةُ يَهُودِيٍّ، فَقالَ: أَليسَتْ نَفْسًا.
الراوي: سهل بن حنيف وقيس بن سعد • البخاري، صحيح البخاري (١٣١٢) • [صحيح]
একদিন সাহল ইবনে হুনাইফ (রা.) ও কায়েস ইবনে সাদ (রা.) কাদেসিয়ায় বসা ছিলেন। তখন তাঁদের পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে কিছু লোক অতিক্রম করল।
তাঁরা দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাঁদের বলা হলো লাশটি অমুসলিমের। তাঁরা বলেন, মহানবী (সা.)-এর পাশ দিয়ে একসময় একটি লাশ নেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন।তাঁকে বলা হলো এটা তো এক ইহুদির লাশ। তখন তিনি বলেন, ‘সে কি প্রাণ (মানুষ) নয়?’ (বুখারি, হাদিস : ১২৫০)
দেখুন, ইসলামে কত সুস্পষ্টভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অমুসলিমদের অধিকারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অমুসলিমদের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুতরাং তাদের ওপর জুলুম করা, তাদের অধিকার খর্ব করা, নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
মক্কা বিজয়ের পর রাসুল (সা.) বিধর্মীদের ওপর কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ করেননি। শত্রুতার জেরে কারো থেকে কোনো ধরনের প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। বরং সবার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা দিয়েছেন। এবং নিজেদের উত্তম আচার-ব্যবহার ও ইসলামের আদর্শ তাদের কাছে ফুটিয়ে তুলেছেন।
তা ছাড়া রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর যে ‘মদিনা সনদ’ ঘোষণা করেছিলেন, তাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাসহ অমুসলিমদের অধিকার ও নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করেন।
আবহমান কাল থেকেই এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা শান্তিপ্রিয়। সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা বজায় রাখা এ দেশের মুসলিমদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। মহান আল্লাহ আমাদের সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও প্রীতি-ভালোবাসা বজায় চলার তাওফিক দিন। এবং ইসলামের সুমহান আদর্শ পালনে আমাদরে কবুল করুন। আমিন
বিরোধ, বৈপরীত্য ও বৈচিত্র্য মানব মনের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য। এটি রোধ করা সম্ভব নয়। এই বিরোধের চূড়ান্ত মীমাংসা হবে পরকালে। তাই দুনিয়ার জীবনে যথাসাধ্য সহাবস্থানের বিকল্প নেই।
۔
লেখকঃ মাওলানা আমিনুর রশিদ পটিয়াবী।
খতিব গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ,লংগদু।