জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক আঁতুড়ঘর গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফ

৮০

জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক প্রদীপ্ত আঁতুড়ঘর গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা। উননিশো নব্বই সনে প্রতিষ্ঠিত দ্বীনের এই বিস্তীর্ণ ইমারতটি তৎসময় থেকে অদ্যবধি ধর্ম, ইতিহাস, নৈতিকতা সমৃদ্ধ আধুনিক শিক্ষা এবং সভ্যতার দ্যুতি পূর্ণরূপে ছড়িয়ে দিয়েছে দিগ্বিদিক। অত্র পল্লিতে প্রায় অন্ধকারে বিবর্জিত মানুষের মন ও মননে ইসলামের সুমহান পয়গাম বিস্তৃত করে প্রতিটি হৃদয়ে করেছে তাকওয়ার জ্বলমলে চাষ। ফলতঃ ঐসব হৃদয় থেকে বিদূরিত হয়েছে বহুদিনের লালিত-পালিত অগণন কালিমার প্রজ্বলিত স্ফুলিঙ্গ। অতঃপর অন্তরের অন্তস্তলের মণিকোঠায় ঠাঁই পেয়েছে আল্লাহ প্রদত্ত প্রিয় নবী (সা.) প্রদর্শিত বিশ্বজয়ী আদর্শের এক সমুজ্জ্বল জীবনধারা। তাই তো অত্র বিদ্যাপীঠের যতসব আলোক ধাঁধানো সুরের মূর্ছনায় অজস্র বেশুমার মনুষ্যকুল লৌহ-মানব থেকে পরশপাথরে হয়েছে পর্যবসিত।

আর এই ঐতিহ্যবাহী দ্বীনের মারকাজটি প্রতিষ্ঠা করেন- বিংশশতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, ইসলামী আন্দোলন এক জ্বলন্ত কিংবদন্তি, দ্বীন প্রচারের একজন অবিস্মরণীয় মডেল, অলিকুল শিরমণি, আল্লামা শায়েখ আব্দুল জব্বার (আল্লাহ তাঁর ওপর রহম করুক)।
সাদাসিধে অনাড়ম্বর জীবনের অধিকারী হলেও তিনি ছিলেন সুন্নতে নববীর পূর্ণ অনুসরণীয় একজন ব্যক্তিত্ব। ইসলামের সুমহান বাণী সমূহ দেশ থেকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। দল-মত নির্বিশেষে সকলের হৃদয়ের অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে একাত্মা ছিলেন তিনি। প্রকৃতার্থে তাঁর সুপরিকল্পিত প্রয়াস এবং উপর্যুপরি দর্শন-চিন্তার কাযর্কর ফসল হলো গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফ নামের এই আলোকময় বাগানটি।

আল্লাহর বাণী চতুর্দিক ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সমতল পরিবেশে যতটুকুন না সময় তিনি ব্যয় করেছেন তারচেয়েও বেশি করেছেন দুর্গম পাহাড়ি জনপদে। কেননা তিনি জানতেন- সমতলে দ্বীনের পয়গাম পৌঁছানোর বহু মানুষ বিদ্যমান থাকবে; কিন্তু পাহাড়ের মতো বন্য প্রাণী আর বিপদসংকুল পরিবেশে সবার আগমন হয়ত হবে না। ফলশ্রুতিতে দ্বীনের দাওয়াও সেথায় পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হবে। তাই তো তিনি তড়িৎ-গতির ন্যায় ছুটে এসেছেন দুর্গম রাঙামাটির ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পিছিয়ে পড়া জনপদ গাঁথাছড়াতে। আর সুখময় হেরার ঝলসানো আলোতে শোভিত করেছেন প্রতিটি তৃষ্ণার্ত প্রাণ।

প্রতিষ্ঠার জন্মলগ্ন থেকে সূচনা করে অদ্যাপি অত্র প্রতিষ্ঠানটি জাতিকে উপঢৌকন দিয়েছে- বেশুমার প্রথিতযশা আলেম, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, কারিগরি প্রশিক্ষক, রাজনীতিবিদ, কবি,লেখক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক এবং প্রাজ্ঞ-বিজ্ঞ মানুষদেরকে।
এভাবে পরিণত হয়েছে একটি পুষ্পের বাগিচা। যে বাগিচা থেকে ফুল হয়ে তার তার মৌ মৌ ঘ্রাণ ব্যাপ্ত হচ্ছে মুহুর্মুহু। আর এই মনমাতানো ঘ্রাণ আহরণ করে অগণন হচ্ছে ফুলেল মানুষ।

জাতির এই মহা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদটি প্রলয়ংকারী দিবসের পূর্বক্ষণ অবধি জারি রাখবার জন্যে স্বতস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে আমার আপনার সবার। তবেই মহাকালের সাক্ষী হয়ে প্রতিষ্ঠানটি জানান দিবে বারংবার।
বর্তমান স্বকীয়তা আরো বেগবান করে অত্র বিদ্যাপীঠস্থানটি পৌঁছে যাক ইতিহাসের সর্বোচ্চ তুঙ্গে। জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং মূল্যবোধের অবর্ণনীয় অভাবের প্রতিটি তৃষ্ণার্ত প্রাণবায়ু হয়ে উঠুক ফুরফুরে আর উৎফুল্ল।

এম. মিজানুর রহমান
প্রাক্তন শিক্ষার্থী, গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফ জব্বারিয় আদর্শ দাখিল মাদরাসা।

সহ-প্রচার সম্পাদক,

গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফ প্রাক্তন ছাত্র সংসদ।

মন্তব্য বন্ধ আছে তবে ট্র্যাকব্যাক ও পিংব্যাক চালু রয়েছে।