শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি হতে পারবেন না এমপিরা : হাই কোর্ট

0 ১১০

আলোকিত লংগদু ডেক্সঃ

বেসরকারি কলেজে পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি পদে সংসদ সদস্যদের নিয়োগ সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে পর্যবেক্ষণ এসেছে উচ্চ আদালতের এক রায়ে। সেখানে বলা হয়েছে, একজন সংসদ সদস্যকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। অপরদিকে গভর্নিং বডির সভাপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পদমর্যাদা সংসদ সদস্যের নিচের পদমর্যাদার। সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য যদি গভর্নিং বডির সভাপতি হন তাহলে কার্যত উক্ত গভর্নিং বডি একটি একক ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে বাধ্য। কারণ নির্বাচিত সংসদ সদস্যের উপর কথা বলার সাহস গভর্নিং বডির কোনো সদস্যের থাকে না এটাই বাস্তব সত্য। সাতক্ষীরার ৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দারকে শ্যামনগর আতরজান মহিলা কলেজের সভাপতি পদে মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ে একথা বলেছেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। এ রায়ে একমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক রাজিক-আল জলিল। খবর বিডিনিউজের।
রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সমপ্রতি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট রিটকারীর আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, রুল শুনানি শেষে গত বছর ২৫ নভেম্বর রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি মো.আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ। সমপ্রতি এ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করার পাশাপাশি সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া পত্রটিও বাতিল করা হয়েছে। এ আইনজীবী বলেন, সংসদ সদস্যরা আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফাযিল ও কামিল মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে সভাপতি হতে পারবেন না। এর আগে ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সভাপতি মনোনীত হওয়া ও বিশেষ কমিটি গঠনের বিধান সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল করা হয়।
হাই কোর্টের এই রায়ে বলা হয়েছে, সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাননীয় সংসদ সদস্যগণকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন সার্বক্ষণিক নিবেদিত থাকতে হয়। এছাড়া গভর্নিং বডির সভাপতির পদ মাননীয় সংসদ সদস্যদের মহান পদের সাথে একেবারেই বিপরীত। একজন সংসদ সদস্যকে তার প্রজ্ঞা এবং মেধা দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, উন্নতির জন্য, উন্নত জীবন যাপনের ব্যবস্থা করার জন্য সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হয়। সংসদ সদস্য থেকে স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয়। তিনি কখনোই তার পদমর্যাদার নিচে কোনো পদে নিজেকে অধিষ্ঠিত করবেন না। প্রত্যেক সংসদ সদস্য তার এলাকার কার্যত নির্বাচিত অভিভাবক, তিনি তার এলাকার অভিভাবক হিসেবে সকল গভর্নিংবডিরও অভিভাবক। তিনি কখনই গভর্নিং বোর্ডের সভাপতির পদ পাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
২০১৬ সালের ১৬ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দারকে সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার আতরজান মহিলা কলেজের সভাপতি পদে মনোয়নন দেয়। এ মনোনয়নের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এস এম আফজালুল হক। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত এস এম জগলুল হায়দারের আতরজান মহিলা কলেজের সভাপতি পদে উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দুই সপ্তাহের রুল জারি করে। তার সভাপতি পদে থাকা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। সে রুলটিই যথাযথ ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে।

আপনার ইমেইল প্রদর্শন করা হবে না।