লামায় প্রভাবশালীদের নির্যাতন থেকে মুক্তি চায় অসহায় পারভীনের পরিবার
নুরুল করিম আরমান লামা
বান্দরবানের লামা উপজেলায় প্রভাবশালী কর্তৃক এক প্রান্তিক কৃষক পরিবারের উপর দিনের পর দিন বিভিন্নভাবে নির্যাতন নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করাসহ হত্যার হুমকিও দিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। একের পর এক নির্যাতনের কারণে বর্তমানে অসহায় হয়ে পরিবারটির ভেতর চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। নানা শঙ্কায় স্থানীয় কেউই মুখ ফুটে প্রতিবাদও করতে পারছেন না প্রভাবশালী বশির সর্দার গংদের বিরুদ্ধে। উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের মেউলারচর গ্রামের প্রভাশালী বশির আহমদ সর্দার ও দলিল আহমদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরেন নির্যাতিতা পারভীন আক্তার ও তার পরিবারের সদস্যরা। তারা প্রভাবশালীদের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের কার্যকরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অভিযোগে জানা যায়, গত ১০ বছর আগে মো. জাকির হোসেনের ছেলে জহির আহমদের কাছ থেকে লামা মৌজার ২৩২নং হোল্ডিং এর দাগ নং ১৭৬১ অংশ থেকে ২০ শতক জমি লিজ নেন লামা সদর ইউনিয়নের মেউলার চরের বাসিন্দা মো. সাইদুল হকের ছেলে ও পারভীন আক্তারের স্বামী মো. জামাল উদ্দিন। সেই থেকে তিনি লিজকৃত জায়গায় একটি দোকান ঘর নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন পারভীন আক্তারের পরিবার। সম্প্রতি ওই জমির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে পাশের বশির আহমদ র্সদার গংদের। তারা লিজকৃত জায়গা তাদের দাবী করে শুরু করেন নানান ষড়যন্ত্র। নানা অজুহাতে হামলা, হুমকিসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। দোকানে কোন ক্রেতাকে যেতে দেয়া হয়না। সর্বশেষ গত ঈদ উল্ আযহার রাতে পারভীনের ছেলে পারভেজকে (১৮) অকারণে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে বেঁধে রাখেন বশির সর্দার গং। একই সময় সপ্তম শ্রেণিতে পড়–য়া বোন তানিয়া আক্তার ভাত নিয়ে দোকানে যাওয়ার সময় পূর্ব থেকে ওঁৎপেতে থাকা বশির আহমদ সর্দারের ছেলে ও তার ভাতিজা গং সংঘবদ্ধ হয়ে জোর পূর্বক তুলে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পারভীনের পরিবারের অন্য সদস্যরা তানিয়াকে উদ্ধারের জন্য গেলে তাদের উপরও বশির আহমদ সর্দার গং এলোপাতড়ি হামলা করেন। এতে ছলেমা খাতুন, পারভীন আক্তার, সুমি আক্তার, রোমন, তানিয়া, ইমন, সোনিয়া ও পারভেজ আহত হন। এ সময় হামলাকারীরা নগদ ১০ হাজার টাকা, ১টি মোবাইল সেট ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। এর আগেও অকারণে জামাল উদ্দিনের স্ত্রী পারভীন আক্তারের ভাই আবু সালামের একটি সিএনজি জোরপূর্বক আটক করে রাখেন বশির আহমদ সর্দার গং। এ ব্যাপারে আবু সালামের বড় ভাই শুক্কুর থানায় অভিযোগ করলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন ওই গাড়িটি উদ্ধার করে দেন। এর কয়েকদিন আগে ধারালো ছুরি নিয়ে পারভীন আক্তারের দোকানের সামনে গিয়ে কেটে ফেলবে, মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেন বশির আহমদ সর্দারের ভাই দলিল আহমদ।
নির্যাতিতা পারভীন আক্তার আরো জানান, তার স্বামী জামাল উদ্দিন ছয় হাজার টাকা দিয়ে দেড় কানি জমি দলিল আহম্মদের কাছ থেকে লাগিয়ত নেন। কিন্তু দলিল আহমদ ওই জমিতে তাদেরকে চাষ করতে দেয়নি এবং টাকাও ফেরৎ দেয়নি। উল্টো নানান ভাবে হয়রানিসহ হুমকি দিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, হামলার সময় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুর রহমান মনু উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বশির আহমদ সর্দারের অপর সহোদর জহির আহমদ ও দলিল আহমদ সরকার দলীয় সমর্থক হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের কয়েকজন জানান, বশির সর্দার তার ছোট ভাই দলিল আহমদ ও জহির আহমদের প্রভাব বিস্তার করে প্রায়ই সময় পারভীনের পরিবারের উপর হামলা ও তাদের দোকান ঘরটি দখল করতে চায়।
এ বিষয়ে জায়গার মালিক ইউছুপ আলীর পক্ষে জহির আহমদ বলেন, পারভীন আক্তারের স্বামীকে ২০ শতক জায়গা লাগিয়কৃত চুক্তি নামায় বশির আহমদ সর্দারের ভাই দলিল আহমদও স্বাক্ষী রয়েছেন। অথচ বর্তমানে ওই জায়গা বশির আহমদ তার বলে দাবী করে অযথা একের পর এক সমস্যার সৃষ্টি করে চলেছেন। এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে থানায় অভিযোগও করেন তিনি।
অভিযুক্ত বশির আহমদ সর্দার বলেন, পারভীন আক্তার যে জায়গায় আছেন সেটি আমার জায়গা। এছাড়া পারভীনের ছেলে আমার বাড়িতে চুরি করতে গেলে আমরা ধরে বেঁধে রাখি। এদিকে দলিল আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান দোকান ঘরটি জামালদের। কিন্তু সেখানে কোন কাস্টমার যাওয়ার উপর আমার আপত্তি রয়েছে। কারন ওই দোকান ঘরে আমার মেয়ের ব্যাবহৃত কাপড় পাওয়া গেছে। পারভীন আক্তারের পরিবারের উপর নির্যাতন নিপিড়নের ঘটনা মিথ্যা ও বানোয়াট।
সূত্রে আরো জানা যায়, দলিল আহমদের মেয়ে সাহেদা আক্তার সুমি ও পারভীনের ভাই আবু সালাম সম্প্রতি পালিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এ ঘটনায় সুমির বাবা দলিল আহমদ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, সুমি তার বাবার বাড়ি থেকে নগদ ৭৫ হাজার টাকা ও তিনভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। কিন্তু সুমি মোবাইল ফোনে জানায়, তার বাবার দাবীটি মিথ্যা। তিনি কোন টাকা বা স্বার্ণালঙ্কার নিয়ে যায়নি। আবু সালামকে ভালোবেসে স্বেচ্ছায় বিয়ে করে তারা সুখে শান্তিতে আছেন। মূলত এ ঘটনার জের ধরে দু’পরিবারের মধ্যে একের পর এক সমস্যা বেড়েই চলছে বলে জানান গ্রামবাসী।
ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুর রহমান মনু জানায়, ঈদের দিন রাতে সেখানে ঝগড়া বিবাদ থামানোর চেষ্টা আমি নিজেই করেছি। দীর্ঘদিন ধরে জামাল দোকান ঘর নিয়ে অন্য একজনের প্রজা হিসেবে দখলে রয়েছেন।
এ বিষয়ে লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, কিছুদিন আগে জামাল উদ্দিনের স্ত্রী পারভীন আক্তারের ভাই আবু সালাম ও দলিল আহমদের মেয়ে সুমী পালিয়ে বিয়ে করেন। এর জের ধরে দুই পরিবারে মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এসব ঘটনায় জামাল উদ্দিন আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।
এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান জানান, পারভীন আক্তারের করা সাধারণ ডায়েরী ও একটি অভিযোগের তদন্ত চলছে।