বিবাহ একটি মহান ইবাদত, যেন কিয়ামতে পরিণত না হয়

0 ১৯৫

সংকলনে:
মাওলানা আমিনুর রশিদ

বিবাহ মহান আল্লাহ প্রদত্ত্ব মহান ইবাদত। যার সুচনা হয়েছে আদি মানব হযরত আদম আ. থেকে এবং যা অব্যাহত থাকবে জান্নাতেও। (আদদুররুল মুখতার। ৩/৩) বিবাহ রহমত বরকতে ভরা একটি ইবাদ যেখানে নেই কোন জটিলতা, দুঃখ ও ব্যথা,কষ্টে ভরা বাড়াবড়ি এবং থাকবেনা কোন গুনাহের সরাঞ্জাম ও আয়োজন। যেখানে আছে শুধৃ পরস্পর সহনুবতি, কোমলতা, শান্তি আর শান্তি এবং প্রেম আর ভালবাসা ও আত্বীয়তা। কিন্তু দুর্ভাগ্য ও অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমরা সে মহান ইবাদতকে বিভিন্ন রুসুমাত, রেওয়াজ ও বিজাতীয় সাংস্কৃতির, বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা এবং তথাকথিত আধুনিকতার নোংরা লেবাস পরিয়ে সে নিয়ামতকে নিয়ামতে পরিনত করেছি। হাকিমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলি থানভী রহ. এর ভাষায় “আজকাল বাগদান অনুষ্ঠান ছোট কিয়ামত, আর বিবাহ অনুষ্ঠান বড় কিয়ামতে পরিনত হয়েছে।”

বিবাহ শাদীতে বিজাতীয় কালচার অবলম্বন করে নিজে সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা ও দেওয়ানা হয়ে এবং অন্যকে উম্মাদনায় ভাসানোর পরিবর্তে সহজসাধ্য ও সর্বোত্তোম পথ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর উত্তম আদর্শের অনুসরণ করি, যাতে রয়েছে ইহকালিন ও পরকাণীন সফলতা। তাই আদর্শ বিবাহ ও বর্তমান সমাজে প্রচলিত বিবাহ ও অনুষাঙ্গিক আরো কিছু বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব, ইশাআল্লাহ।

বিবাহ বা নিকাহ কি?
ইসলামী শরীয়তে পরিভাষায় নিকাহ বা বিবাহ বলা হয়, পুরুষ ও নারীর ( যাকে বিবাহ করা বৈধ) সম্মতিতে সম্পাদিত এমন আকদ চুক্তিকে যা পুরুষের জন্য ঐ নারীকে দৈহিকভাবে উপভোগ করা বৈধ করে দেয়। ( আদদুর রুল মুখতার, খন্ড-০৩, পৃ.-৩-৪।

বিবাহের স্থান ও কালঃ
বিবাহ যেহেতু একটি ইবাদত তাই এর জন্য সবচেয়ে বেশী উপযোগী একটি স্থান নির্বাচন করাই সমিচীন। এই উম্মতকে সে ব্যাপারে দিক নির্দেশন দিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন واجعلوه فى المساجد তোমরা বিবাহ শাদীর আকদ মসজিদে কর। সুত্র: সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং-১০৮৯।

আর বিবাহের সময় যদি জুমার দিনের শেষাংশে হয় তাহলে সবচেয়ে উত্তম হয়। (সুত্র: ফাতহুল কাদির-৩/১০২) এতে নিম্মোক্ত ফায়দা অর্জিত হবে।
১. সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিবাহের আকদের এলান হয়ে যাবে।
২. জুমার দিনের বরকত অর্জিত হবে।
৩. দুয়া কবুল হওয়ার সময়।
৪. দিনটি অধিক বরকতময়, যে দিন হযরত আদম আ.কে সৃষ্টি করা হয়। সুত্র: মিরকাত-৬

বিবাহের ফজিলত:
বিবাহের ফজিলত প্রমানের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তায়ালা এমন কোন নবী –রাসুল প্রেরণ করেননি যিনি বিবাহ করেন নি। ( হযরত ঈসা ও হযরত ইয়াহইয়া আ. ছাড়া) আল্লাহ তায়াল ইরশাদ করেন, ولقد ارسلنا رسلا من قبلك وجعلنا لهم ازواجاً و ذرية অর্থ: বস্তুত তোমরা আগেও আমি বহু রাসুল পাঠিয়াছি এবং তাদেরকেও স্ত্রি ও সন্তানাদি দিয়েছি। ( সুরা রা’দ- ৩৮)
অসংখ্যা হাদিস শরীফে বিবাহের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। নিম্মে কয়েকটি পেশ করা হল ।

১. বিবাহ দ্বীনের অর্ধেক:
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন اذا تزوج العبد فقد استكمل نصف الدين فليتق الله فى النصف الباقى অর্থাৎ- ‍ুখন কোন বান্দা বিবাহ করে তখন সে ধর্মের অর্ধাংশকে পরিপূর্ণ করে নেয়। অতএব< সে যেন অবশিষ্ট অর্ধেকে আল্লাহকে ভয় করে। সুত্র; তিরমিযি- হাদিস নং-১০৮০ ।

দেখুন উপরোক্ত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহকে দ্বীনের অর্ধেক সাব্যস্ত করেছেন। কারণ একজন মুমিনের দ্বীন বিনষ্টের মুলে মৌলিকভাবে দুটি বিষয় দায়ী, ১. লজ্জাস্থান ২. পেট। বিবাহের মাধ্যমে লজ্জাস্থানের সুরক্ষা হয়। আর আয়- রোজগারে হালাল-হারাম বেঁচে চললে পুরো দ্বীরে হেফাজত হয়।

২. বিবাহ রাসুল স. এর সুন্নত:
ক. অন্য হাদিসে রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ما بال اقوام قالوا كذا كذا لكنى اصلى وانام واصوم وافطر واتزوج النساء فمن رغب عن سنتى فليس منى অর্থাৎ- লোকজনের কি হল? তারা এমন এমন কথা বল? কিন্তু আমি নামায পড়ি এবং ঘুমাই, নফল রোজা রাখি, কখনো রাখিনা। আবার বিবাহ শাদীও করি। অতএব যে ব্যাক্তি আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুত্র: সহিহ বোখারী ও মুসলিম।

খ. অন্য হাদিসে রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন النكاح من سنتى فمن رغب عن سنتى فليس منا অর্থাৎ নিকাহ আমার সুন্নাত, অতএব যে আমার সুন্নাতকে পালন থেকে বিরত থাকবে, সে আমার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুত্র: ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১০৩৯০ ।

গ. অন্য হাদিসে রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন من قدر على ان ينكح فلم ينكح فليس منا অর্থাৎ-বিবাহের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যাক্তি বিবাহ করলনা সে আমার অনুসারী নয়। সুত্র; দারমী হাদিস নং-২০৮৭

ঘ. অন্য হাদিসে রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন تزوجوا فان التزوج خير من عبادة الف سنة অর্থাৎ- তোমরা বিবহি কর, কেননা বিবাহ এক হাজার বৎসরের নফল ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। সুত্র: তাবারানী আল নোয়াহ৬/৫ ।

বিবাহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
১. প্রশান্তি লাভ করা। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ومن اٰيته ان خلق لكم من انفسكم ازواجاً لتسكنوا اليها وجعل بينكم مؤدة و رحمةঅর্থাৎ তাঁর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন। যাতেস তোমরা তাদের কাছে গিয়ে প্রশান্তি লাভ কর এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও দযঅ সৃষ্টি করেছেন। (সুরা রুম আয়াত ২১)

২. বদ নজর ও কুদৃষ্টি করা থেকে বেঁচে থাকা।

৩. লজ্জাস্থানকে সংযত রাখে। এ ব্যাপারে হাদিসে রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন فانه اغض للبصر واحسن للفرج অর্থাৎ- বিবাহ দৃষ্টিকে খুব বেশী অবনত রাখে এবং লজ্জা স্থানকে সংযত রাখে। সুত্র: সহিহ বোখারী- হাদিস নং-১৯০৫, মুসলিম-হাদিস নং ১০১৮

৪. সন্তান জম্ম দেওয়া। বিবাহের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হল সন্তান জম্ম দেওয়া। এব্যাপারে হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন تزوجوا الودود الولود فانى مكاثر بكم الامم অর্থাৎ- তোমরা স্বামীভক্ত অধিক হারে সন্তান জম্মদানে সক্ষম মেয়েদেরকে বিবাহ কর, কারণ তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের উপর আমি গৌরব করব। সুত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০৫০।

৫. তাকওয়া ও পরহেজগারী বজায় রাখা। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন محصننين غير مسافحين ولا متخى اخدان অর্থাৎ- তোমাদের বিবাহ করা যেন তাকওয়া ও পরহেজগারীর উদ্দেশ্যেই হয়, কেবল ইন্দ্রীয় বাসনা চরিতার্থ করার বা গোপন প্রণয়িণী বানানোর ইচ্ছা যেন না হয়। সুরা মায়িদা, আয়াত-০৫)

পাত্রী নির্বাচন ও আদর্শ নারীর গুনাবলী:
বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্রী নির্বানচন খুবই গুরুত্ত্বপুর্ণ বিষয়। কারণ স্ত্রীর মাধ্যমেই স্বামী প্রশান্তি লাভ করে থাকে। সুতারাং পাত্রী নির্বাচনে সামান্য অসচেনতা ও অবেহেলা চির অশান্তির দিকে ঠেলে দিকত পারে। তাই হাদীসের আলোকে পাতওী নির্বাচনে লক্ষণীয় গুরুত্ত্বপূর্ণ দিকগুলো জেনে নিই।
১. নেককার ও দ্বীনদার হওয়া। সুত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৩৬২২
২ বংশীয় মর্যাদার অধিকারী হওয়া। সুত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৫০৮২
৩. কুমারী হওয়া । সুত্র: ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৮৬১
৪. গর্ভ ধারণে সক্ষম হওয়া। সুত্র: সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং- ৩২২৭
৫. স্বামীর ভক্ত ও অনুসারী হওয়া । সুত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০৫০
৬. স্বামীর অনুগত হওয়া । সুত্র: সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং- ৩২৩১
৭. ঘরের তত্ত্বাবধানের যোগ্যতাসমপন্ন হওয়া। সুত্র: সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ২৫৫৪
৮. অতিমাত্রায় আত্মসম্মান বোধ না থাকা। সুত্র: সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং- ৩২৩৩
৯. সচ্চরিত্রা হওয়া। সুরা নুর , আয়াত নং ০৩
১০. পছন্দমত সুন্দরের অধিকারী হওয়া। সুত্র: মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-১৩৪২৯
১১. মেয়ে সাদাসিধে হওয়া সুত্র: হাকেম, হাদিস নং- ২৪৬৬১
সুত্র: আল আবরার, বর্ষ-২, সংখ্যা-৬
বরকতময় বিবাহ:
উপরে উল্লেখ হয়েছে যে, বিবাহ হল মহান আল্লাহ প্রদত্ত্ব মহান ইবাদত। সুতারাং সে বিবাহকে বরকত ও রহমতপূর্ণ করার জন্য সকল ক্ষ্রেত্রে হাদিসে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

১. বিবাহে খরচ কম হওয়া।
এব্যাপারে রাসুল স. ইরশাদ করেন, اعظم النكاح بركة ايسرها مؤنة অর্থাৎ- সে সব বিবাহই সর্বাধিক বরকতময়, যে বিবাহে খরচ কম হয়। সুত্র: কাশফুল আসতার, হাদিস নং ১৪১৭।

২.মহর কম হওয়া: এব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন من يمن المرأة تيسير خطبتها و تيسير صداقها وسير رحمها অর্থাৎ- প্রস্তাব দানে সহজ হওয়া, মহর কম হওয়া এবং দ্রুত সন্তান জম্মদানে সক্ষম হওয়া মেয়েদের জন্য সৌভাগ্যবান ও বরকতময় হওয়ার লক্ষণ। সুত্র: হাকেম, হাদিস নং -২৭৩৯

৩. স্বামীর পক্ষ হতে বিবাহ ভোজের আয়োজন করা। এব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুর রহমান বিন আওফের গায়ে খেখলেন হলুদ রঙের চিহ্ন এবং বললেন, ‘এট কি?’ তিনি বলেন, ‘আমি বিবাহ করেছি এক নারীকে এক নওয়াত ওযনের সোনা মোহর দিয়ে।’ তিনি (রাসুল স.) বলেন, ‘আল্লাহ বরকত দান করুন তোমার ।’ “অলীমা ( বিবাহ ভোজ) কর , যদিও তা হয় একটি মেষ(বা বকরী) দিয়ে । সুত্র সহিহ বুখারী ও মুসলিম
বিবাহ যেন অভিশাপে পরণিত না হয়।
বিবাহ মহান আল্লাহ প্রদত্ত্ব মহান এক বড় ইবাদত ও নিয়ামত। যাকে রাসুল স. নিজের সুন্নত এবং তিনি নিজেই বিবাহকে দ্বীনের অর্ধেক বলে ঘোষণা করেছেন। সে বিবাহ যদি আল্লাহ নির্দেশ ও রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তারিকা অনুযায়ী হয়, তাহলে তা হবে মহান আল্লাহর নিয়ামত ও ইবাদত এবং কল্যাণ ও বরকতের মাধ্যম। আর যদি কুরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত বিবাহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাদ দিয়ে, আল্লাহর আদেশ- নিষেধকে প্রত্যাখান করে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরিকা ও সাংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করে বিজাতীয় রীতি-নীতিকে গ্রহণ করে নষ্টামী-ভষ্টামী, বেহায়াপনা, প্যাকেজের নামে নাজ-গান ও অনুষ্ঠানের নামে যুবক-যুবতী ও নারীপুরুষের অবাদে মিলামিশার আয়োজন করা হয় তখন সেটি আর নিয়ামত ও ইবাদত এর পরিবর্তে অভিশাপ ও কিয়ামতে পরিতি হয়ে যায়। (নাউজু বিল্লাহ)

নিম্মে অভিশাপ্ত ও বরকতহীন বিবাহের কয়েকটি কারণ বর্ণনা করা হল।
১. রূপ ও সম্পদের মোহে বিবাহ করা।
ইসলাম পুরুষকে ধার্মিকতা, সততা ও তাকওয়া ইত্যাদি গুণের দিকটা বিবেচনা করে বিবাহ করতে উদ্বুদ্ধ করে। কেবল নারীর ধন-সম্পদ , সৌন্দর্যও বংশ মর্যাদাকে প্রধান্য দিতে নিষেধ করেছে। এ প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, من تزوج امرأة لعزها لم يزده الله الا ذِلًّا، ومن تزوجها لماله لم يزده الله الا فقرًا،ومن تزوجها لحسنها لم يزده الله الادنائةً،ومن تزوج اموأة لم يرد بها الا ان يغص بصره و يحصن فرجه او يصل رحمه بارك الله له فيها و بارك لها فيها،، অর্থাৎ-যে ব্যাক্তি কোন নারীকে তার মন-মর্যদার জন্য বিবাহ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার লঞ্ছনাকেই বাড়িয়ে দেবেন। আর যে ব্যাক্তি তাকে তার ধন-সম্পদের মোহে বিবাহ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার দরিদ্রতাকে আরো বাড়িয়ে দেবেন। আর যে ব্যাক্তি তাকে তার বংশ মর্যাদার জন্য বিবাহ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার হীনতা ও অসম্মান বাড়িয়ে দেবেন। আর যে ব্যাক্তি কোন নারীকে কেবল দৃষ্টি সংযত, লজ্জাস্ঞানকে হেফাজত অথবা আত্মীয়তর সম্পর্ককে অটুট রাখার জন্য বিবাহ করবে , আল্লাহ তায়ালা উভয়কে উভয়ের জন্য মঙ্গলময়- বরকতময় করে দেবেন। সুত্র: তাবারানী ফিল আওসাত, হাদিস নং-২৩৬৩
২. অলিমা পরিবর্তে বর যাত্রা ভোজের আয়োজন করা।
বিবাহের সময় বা বিবাহোত্তর ভোজের আয়োজন করা স্বামীর দায়িত্ব এবং সুন্নত ও বরকতময় বিষয় । তার বিপরীতে উল্টা কণের পক্ষ থেকে ভোজের আয়োজন করা সেটি সুন্নত বর্জিত ও বরকতহীন কাজ। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে বরযাত্রী নির্ধারণ ও খাবারের তালিকা নিয়ে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি করা, কণের অভিভাবক কে চাপ প্রয়োগ করে বা মানসিক চাপে রেখে ইচ্ছামত খাবারের তালিকা আদায় করে নেয়াও একটি গর্হিত কাজ , যা কোন কোন ক্ষেত্রে হারামে পরিণত হয়ে যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
ألا ولا يحل لامرئ من مال أخيه شيء إلا بطيب نفس منه
সাবধান! কারো জন্য তার ভাইয়ের কিছুমাত্র সম্পদও বৈধ নয়, যদি তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি না থাকে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৪৮৮; সুনানে দারাকুতনী, হাদীস : ২৮৮৩; শুআবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস : ৫৪৯২
অর্থাৎ কেউ কিছু দিলে বা পানাহার করালেই তা ভোগ করা হালাল হয় না, যে পর্যন্ত না খুশি মনে দেয়। পুত্র-কন্যাও এ বিধানের বাইরে নয়। সুতরাং পিতা যদি বাধ্য হয়ে নিজের কন্যার বর পক্ষকে কোনো কিছু ভোজের ব্যবস্থা করে তবে তা গ্রহণ করা তার জন্যও বৈধ নয়। হ্যাঁ যদি কণের পিতা নিজের পক্ষ থেকে আত্বীয়তার বন্ধন স্বরূপ বর পক্ষকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে ভেজের আয়োজন করে তাতে কোন সমস্যা নেই বরং সাওয়াবের কাজ হবে।

৩. মহর আদায় না করে যৌতুক নেওয়া। সামাজিক প্রথা ও প্রচলনের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বস্তু হল যৌতুক। যা সমাজের জন্য ক্যান্সার ও সামাজিক শৃঙ্খলার মৃত্যুদূত ও হিন্দু-সমাজের আশীর্বাদ।

যৌতুকের পরিচয়:বিয়ের সময় বা বিয়ের আগে-পরে যে কোনো সময় কনে বা কনেপক্ষের নিকট থেকে বর বা বরপক্ষের লোকেরা যে সম্পদ বা সেবা গ্রহণ করে কিংবা সামাজিক প্রথার কারণে তাদেরকে দেওয়া হয়, তদ্রূপ কনে বা কনেপক্ষের লোকেরা মোহর ও ভরণ-পোষণের অধিক যা কিছু উসূল করে বা সামাজিক প্রথার কারণে তাদেরকে দেওয়া হয় এই সবই যৌতুক । যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরুপে হারাম। এবং অনেক হারামের সমষ্টি।
যৌতুক হল মুশরিক সমাজের রেওয়াজ,অনেক বড় জুলুমের কাজ,পরস্ব হরণ, ডাকাতী ও লুটতারজীর বটে, লালসা হিংস্রতা ও চারিত্রিক হীনতার প্রতিক, এমন একটি অপরাধ যা অসংখ্য অপরাধের দার উম্মুক্ত করে দেয়। যৌতুকের লেনদেন এত জঘণ্য অপরাধ যে, তা শুধু হারাম বা কবীরা গুনাহ নয়, এমন অনেকগুলো হারাম ও কবীরা গুনাহর সমষ্টি, যার কোনো একটিই যৌতুকের জঘণ্যতা ও অবৈধতার জন্য যথেষ্ট ছিল ।
এব্যাপার কুরআন মজীদে একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
لا تأكلوا اموالكم بينكم بالباطل
তোমরা বাতিল উপায়ে একে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না।-সূরা বাকারা : ১৮৮; সূরা নিসা : ২৯
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لا يأخذن أحدكم متاع صاحبه لعبا جادا وإذا أخذ أحدكم عصا أخيه فليرددها عليه
অর্থাৎ কেউ যেন তার ভাইয়ের জিনিস উঠিয়ে না নেয়; না ইচ্ছা করে, না ঠাট্টাচ্ছলে। একটি ছড়িও যদি কেউ তুলে নেয় তা যেন অবশ্যই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭৯৪০; ১৭৯৪১; ১৭৯৪২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৫০০৩; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২১৬০)
যারা যৌতুক দাবি করে বা গ্রহণ করে তাদের উচিত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই বাণী স্মরণ রাখা-
لا يدخل الجنة لحم نبت من سحت النار أولى به
ঐ দেহ বেহেশতে যাবে না, যা হারাম (গিযা) থেকে উৎপন্ন হয়েছে। দোযখের আগুনই তার অধিক উপযোগী।-সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ১৭২৩, ৪৫১৪; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ২০৭১৯—২

(এবিষয়ে বিস্তারিত এক কলাম লিখলেই বিষয়গুলো পরিস্কার হয়ে যাবে ইনশাল্লালাহ।)
আল্লাহ আমাদের সমাজকে পবিত্র করুন, সকল কুফরী ও শিরকী কর্মকান্ড থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন এবং একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এই সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে

আপনার ইমেইল প্রদর্শন করা হবে না।