পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালিত
মোঃ আরিফুর রহমান
আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে পার্বত্য জীববৈচিত্র্য শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়স্থ মাইনী মিলনায়তনে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মোঃ নূরুল আলম নিজামী (অতিরিক্ত সচিব) এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব সুদত্ত চাকমা ( সচিব, তথ্য কমিশন) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. এ এফ ইমাম আলী (উপাচার্য) বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটির ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেডের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইফতেকুর রহমান, পিএসসি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গত ২০১৪ সাল থেকে ইসিমোড, এফএও ও সরকারি বেসরকারি বিভাগ/দপ্তর/সংন্থার সহযোগিতায় ঢাকায় প্রতিবছর ৪দিন ব্যাপি বৃহত্তর পরিসরে আন্তর্জাতিক পর্বত্য দিবস পালন করা হয়েছিল। কোভিড সংক্রমনের কারণে এবছর ঢাকায় আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালন করা হচ্ছে না বিধায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত পরিসরে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস উপলক্ষ্যে “পার্বত্য জীববৈচিত্র্য ” শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল আলম নিজামী (অতিরিক্ত সচিব) সঞ্চালনায় সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে উন্মুক্ত আলোচনায় কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স অফিস, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং রান্দরবান পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম সরওয়ার কামাল, প্রবীন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে, বিপ্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, আশিকা রাঙ্গামাটি, রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি মোঃ বেলাল হোসেন ভূঁইয়া, রাঙ্গামাটির বন বিভাগের সিএফ মুহাম্মদ সুবেদার ইসলাম, পবন কুমার চাকমা, উপ-পরিচালক ডিএই রাঙ্গামাটি সুচরিতা চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, প্রোগ্রেসিভ রাঙ্গামাটি, মিজ শাপলা দেবী ত্রিপুরা, সাপারি গ্রুপ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, সুশীল সমাজের গণমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ পার্বত্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে করণীয় সম্পর্কে সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য কমিশনের সচিব এবং সেমিনারের প্রধান অতিথি সুদত্ত চাকমা “পার্বত্য জীববৈচিত্র্য” শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, জীববৈচিত্র্য সাথে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন করা হয়েছে। সে আইনের আলোকে পার্বত্যাঞ্চলের সকল বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের সমন্বয়ে পার্বত্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বনভূমি ক্রমান্বয়ে সংকোচিত হয়ে আসছে। আগে বন-পাহাড় দু’টোই ছিল। এখন বন উজার হয়েছে আছে শুধু পাহাড়। আজ পাহাড়ের অবস্থাও তেমন ভাল নেই। বন নির্ভর পাহাড়ের মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে। পার্বত্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতি হয় না এমন দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে কর্মসংস্থান সহায়ক টেকসই বিকল্প জীবিকায়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদসহ অন্যান্য সংস্থার মিলে মেগা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে পার্বত্য জীববৈচিত্র সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে বলে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী বিনির্মানে সকলকে একসাথে সমন্বয় করে কাজ করার আহবান জানান।
সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পার্বত্য জেলায় বসবাসরত গ্রামীণ জনমানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মিশ্র ফল চাষ, উন্নত জাতের মসলা চাষ, তুলা চাষ, সৌর বিদ্যুৎ সুবিধাদি প্রদান, সুপেয় পানি সরবরাহ, কৃষি ও সেচনালা, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন, নারী ক্ষমতায়ন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এসব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে পাহাড়ের মানুষ এখন আগের চেয়ে ভাল অবস্থানে আছে। মানুষ ও জীববৈচিত্র্য এর অংশ উল্লেখ করে সভাপতি আরো বলেন পাহাড়ী এলাকায় একসময় ১৬% এর বেশী বনভূমি ছিল। এখন তা কমে ১২% এর নিচে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হলে বন-পাহাড়কে রক্ষা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বন-পাহাড়, ঐতিহ্য এবং মানুষের অধিকারকে রক্ষা করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড তিন পার্বত্য জেলায় সিইজিআইএস সহযোগিতায় ৪৫০০ পাড়াকেন্দ্র এর মাধ্যমে পানির উৎস জরীপ কাজ পরিচালনা করছে। জরীপ কার্যক্রম সম্পন্ন করে তিন পার্বত্য জেলায় পানির উৎস সংস্কারসহ মাস্টার প্লান তৈরী হবে। এক্ষেত্রে পার্বত্য জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। এর সুফল পার্বত্যবাসী শীঘ্রই ভোগ করতে পারে। সভাপতি সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এবং অংশগ্রহণকারীদের মূল্যবান সময় ও সুচিন্তিত মতামত ও দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল আলম নিজামী (অতিরিক্ত সচিব), আশীষ কুমার বড়ুয়া (যুগ্মসচিব), সদস্য প্রশাসন ও সদস্য সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, সদস্য-পরিকল্পনা ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী (উপসচিব), মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ (উপসচিব), কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স অফিস, খাগড়াছড়ি, সাবেক রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ মনিরুজামান মহসিন, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, ড. মুন্সী রাশীদ আহমদ মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্তকর্তা, খাগড়াছড়ি পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, নিখিল চাকমা, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞাপন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সিনিয়র এ এস পি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পুলিশ সুপার প্রতিনিধি, রাংলাই ম্রো, সাইরু হিল রিসোর্ট, চিম্বুক, ১২ মাইল, বান্দরবান, মিজ্ ম্যা ম্যা নু, হিমালিকা, বান্দরবান, লিনা লুসাই, ইউনিসেফ প্রতিনিধি, এড. ভবতোষ দেওয়ান, হেডম্যান ১০৬ নং কমিলাছড়ি খোলা, মিজ স্বান্তনা খীসা, নারী হেডম্যান কারবারী নেটওয়ার্ক, ডা. বরুন দত্ত, ডিএলও রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকবৃন্দ, বোর্ডের উর্ধবতন কর্মকর্তা/কর্মচারী সহ বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মকর্তা/কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।