খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন

0 ২৭৪
আওয়ামী লীগ নেতা মংসুইপ্রু চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে ১৫ সদস্যের খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গত বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সজল কান্তি ভৌমিক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে পরিষদ পুনর্গঠনের কথা জানানো হয়। এর আগে ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুন:গঠিত ফাইলে অনুমোদন দেন। পুন:গঠিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে সদস্যদের ক্ষেত্রেও রদবদল হয়েছে।
পুনর্গঠিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যরা হলেন, এডভোকেট আশুতোষ চাকমা, নিলোৎপল খীসা, শুভমঙ্গল চাকমা, রেম্রাচাই চৌধুরী, মংক্যচিং চৌধুরী, মেমং মারমা, নির্মলেন্দু চৌধুরী, আব্দুল জব্বার, মাইন উদ্দিন, খোকনেশ্বর ত্রিপুরা, পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, হিরনজয় ত্রিপুরা, শতরূপা চাকমা ও শাহিনা আক্তার।Image may contain: 13 people, text
আইন অনুযায়ী জনগণের ভোটে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন হওয়ার কথা থাকলেও বিগত সরকারগুলো ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়োগ দিয়ে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রথম ও নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন। এর পর থেকে আর নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা পরিষদ গঠনের জনগণের দাবি উপেক্ষা করে দলীয় লোক দিয়ে পরিচালনা করে আসছে জেলা পরিষদ।
একটি সূত্র জানায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুন:র্গঠনের সুপারিশ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পার্বত্য মন্ত্রণালয় এ তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হলে ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন।
২০১৫ সালের ২৫ মার্চ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে ১৫ সদস্য করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। পরিষদ পুনর্গঠনে তার পরিবর্তে প্রস্তাবিত খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মংসুইপ্রু চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করা হলো। তিনি আগের পরিষদে সদস্য ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলায় স্থানীয় সরকার পরিষদ’। একজন চেয়ারম্যান (উপজাতি) ও ৩০ জন সদস্য নিয়ে এই পরিষদের যাত্রা। প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে পরিষদটি গঠন হওয়ার কথা ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালের ৫ আগষ্ট ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে নির্বাচিত পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে একজন চেয়ারম্যান (উপজাতি) ও চার সদস্য মনোনয়ন দিয়ে অন্তবর্তীকালীন পরিষদ গঠন করে। সে থেকে নির্বাচন বিহীন ও ফ্যাক্স বার্তায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্য পরিবর্তন হয়ে হওয়ায় সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়ে আসছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের টানাপোড়েনে আর সরকারের উচ্চ মহলের আন্তরিকতার অভাবে একটি কার্যকর স্থানীয় সরকার মাধ্যমকে গণতান্ত্রিক ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল করা হয়নি আড়াই যুগেরও বেশী সময়ে।
১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বদৌলতে স্থানীয় সরকার পরিষদের নাম বদল করে রাখা হয় ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’। প্রথম অবস্থায় ৬ মাস পর পর আদালতের মাধ্যমে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হতো। তবে বর্তমান নিয়োগে বলা হচ্ছে সরকার চাইলে যে কোন মুহুর্তে পরিষদ পুনর্গঠন করতে পারবে। এদিকে জবাবদিহিতা না থাকায় পার্বত্য জেলা পরিষদ দূর্নীতির আখরায় পরিণত হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখিও হলেও কাজের কাজ কোনটাই হয়নি।
বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সংশোধনীতে সেই ৫ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন পরিষদকে ১ জন চেয়ারম্যান ছাড়াও ১৪ জন সদস্য করা হয়।

আপনার ইমেইল প্রদর্শন করা হবে না।