আজ মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু। প্রস্তুত জেলেরা

0 ৬৮

।। সাকিব আলম মামুন ।।
…………………………………………
দীর্ঘ ৩ মাস পর রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে জীবিকা নির্বাহের উদ্দ্যেশে জেলেদের মাছ ধরা পূর্বের ন্যায় দেখা যাবে। বাংলাদেশ মৎস অধিদপ্তরের নির্ধারিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গত ১লা মে ২০২০ খ্রিঃ হতে কাপ্তাই হ্রদে প্রশাসনের সম্পূর্ণ ভাবে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সাময়িক এই মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার বিশেষ কারণ- বছরের এই ৩-৪ মাস মৎস প্রজনন ঋতু অর্থাৎ মা মাছ ঐ সময়ে ডিম দিয়ে থাকে এবং তা থেকে বংশ বিস্তার ঘটে।
সোমবার (১০ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২ টার পর থেকে সরকারি বিধি মোতাবেক বাংলাদেশ মৎস অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দীর্ঘ ৩ মাস ১০ দিন পর আবারো নদী-নালা, খাল-বিল, সমুদ্র-সৈকতে অর্থাৎ নৌপথে মাছ শিকারে বৈধতা ঘোষনা দিয়েছে। করোনা প্রাদুর্ভাবে এবং ৩ মাস মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেদের জীবনমান অনেকটাই বিঘ্ন ঘটেছে বলে জানা যায়।
আব্দুর রহিম নামের এক জেলে জানায়, প্রতি বছরের মতো এবারো প্রায় ৩ মাস মাছ ধরা নিষেধ করেছে সরকার। তাই মাছ ধরা থেকে বিরত ছিলাম। কিন্তু অন্যান্য বছর গুলোতে সঞ্চিত টাকা দিয়ে অথবা অন্য কোন কাজ করে সংসার-পরিবার চালানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এবার করোনার কারণে পরিবারের সকলকে নিয়ে ঈদ-উৎসবে স্বাভাবিক দিন কাটাতে পারি নাই। অনেক ধার দেনা করে জাল-নৌকা ঠিক করে নদীতে এসেছি মাছ ধরার জন্য।
কাশেম আলী নামের আরেক জেলে বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এইবার আমাদের অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে জেলে কার্ডের মাধ্যমে কিছু সহায়তা পেয়েছি; কিন্তু এই সহায়তা আমার পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয়। সংসারে ৭ সদস্যের পরিবার। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ও করোনার কারণে বিশাল ঋণের বোঝা মাথায় রয়েছে।
মাছ ব্যবসায়ী কামাল উদ্দীন বলেন, সরকার ৩ মাস মাছ ধরা বন্ধ করে দিলে আমার পরিচিত জেলেরা যারা আমার কাছে মাছ বিক্রি করে তারা বেশির ভাগই ঐ ৩ মাস সাংসারিক খরচ চালানোর জন্য এবং জাল-নৌকা মেরামতের জন্য অগ্রিম টাকা-পয়সা নিয়ে নেয়। গত বছরের চেয়ে এবার করোনা ভাইরাসের কারণে অন্য কোনো কাজও করতে পারে নাই, তাই ঋণ আগের তুলনায় বেশি নিয়েছে।
অন্যদিকে সচেতন নাগরিক মহল জানায়- নিষিদ্ধ ৩ মাসের মধ্যে অল্পকিছু দিন ২০-২৫ দিন আগে কাপ্তাই হ্রদে সরকারি ভাবে মৎস অধিদপ্তর থেকে পোনা মাছ অবমুক্ত করেছে প্রশাসন। তারমধ্যে এবার যথা সময়ে নদীতে পানি না হওয়ায় মাছের ডিম ও অবমুক্ত করা মাছের পোনা সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে পারে নি। কিন্তু এদিকে সময় পার হয়ে যাওয়ার কারণে মাছ ধরা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এই ছোট-ছোট পোনা মাছ গুলো ধরা হলে হয়তো অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নদীর মাছ বিলিন হয়ে যাবে- এতে করে বিভিন্ন প্রজাতির রুই ও কার্প জাতীয় মাছ বিপন্ন ও বিলুপ্ত হওয়ার প্রবনতা রয়েছে। ফলে মাছ থেকে আসা আমিষ এবং বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশ ও জনগণ বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

আপনার ইমেইল প্রদর্শন করা হবে না।