মহালছড়ি-জালিয়াপাড়া সড়ক, ভূমি দখলের নেপথ্যে সন্ত্রাসীদল ইউপিডিএফ
![](https://alokitolangadu.com/wp-content/uploads/2021/06/FB_IMG_1624256828769.jpg)
আলোকিত লংগদু ডেক্সঃ
পার্বত্যচট্টগ্রামে অধিকাংশ জায়গাগুলো পাহাড় ও গহীন অরণ্যে ঘেরা। এই দুর্গম জনপদের মানুষগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থা একদম নাজুক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাহাড়ে প্রবেশ করার পর থেকে উঁচু নিচু পাহাড় ও গহীন অরণ্যে বসবাসরত মানুষদের জীবনমান উন্নয়ন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য জীবনবাজি রেখে অপ্রতিরোধ্যভাবে কাজ করে আসছে। পাহাড়ে অপ্রতিকুল পরিস্থিতিতে মানবসেবা করতে গিয়ে রাঙামাটি পাহাড় ধ্বসে ৬ সেনাসদস্য নিহত হয় ২০১৬ সালে। এই ঘটনা তো বেশি দিনের নয়। সুতরাং এই কথা অস্বীকার করারও সুযোগ নেই।
![](https://www.dainikkhagrachari.com/media/PhotoGallery/2018November/WhatsApp-Image-2021-06-21-at-120950-PM-2106211211.jpeg)
রাঙামাটি জেলার সাথে মহালছড়ি (ভায়া সিন্দুকছড়ি) জালিয়াপাড়া এবং ফেনীর সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না। অদূর দিয়ে ঘুরে যেতে হতো গন্তব্যে। সেনাবাহিনীর মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি দৃষ্টিনান্দন সড়ক নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলের মানুষদের জন্য যেমন উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি জীবনমান পরিবর্তনেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
![](https://www.dainikkhagrachari.com/media/PhotoGallery/2018November/WhatsApp-Image-2021-06-21-at-121047-PM-2106211212.jpeg)
জালিয়াপাড়া-সিন্দুকছড়ি থেকে মহালছড়ি পর্যন্ত আনুমানিক ২৪ কি.মি নতুন সড়ক নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। ২৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের ফলে উক্ত জনপদে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। সড়কের আশেপাশের জায়গাগুলোর দাম ওঠেছে আকাশচুম্বী। এই সড়ক পথের সব জায়গাই খাস জমি। সড়কের আশেপাশের জায়গাগুলো ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের আকৃষ্ট করেছে৷ ইতোমধ্যে সড়কটিকে একনজর দেখতে পাহাড়ি-বাঙালিসহ হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু ভীড় করেছেন সেখানে।
![](https://www.dainikkhagrachari.com/media/PhotoGallery/2018November/WhatsApp-Image-2021-06-21-at-121045-PM-1-2106211212.jpeg)
এই সড়কটি নির্মানের ফলে যেমন এই জনপদের মানুষের জীবন মান উন্নয়ন হয়েছে, তেমনি এই সড়কটিকে ঘিরে পাহাড়ের উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ তাদের সমর্থিত লোকজনকে নিয়ে সড়কের আশেপাশের জায়গা দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে সেনাবাহিনীকে নিয়ে ইউপিডিএফ এর অপপ্রচার।
সেনাবাহিনীর উদ্যোগে দুর্গম পঙ্খীমুড়া, ধমনীঘাট এলাকায় সরকারী খাস খতিয়ানের জমিতে স্থাপন করা হচ্ছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। এই ক্লিনিক স্থাপনকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ প্রসিত বিকাশ খিসার সন্ত্রাসীরা স্থানীয় মানুষদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিক্ষোভ মিছিল, অবরোধসহ প্রতিবাদ ও নানান কার্যক্রম গড়ে তোলার অপচেষ্টা করেছে। অরাজনৈতিক সংগঠন নাম দিয়ে ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম ভূমি দখল ও ঘর নির্মাণের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করে।
![](https://www.dainikkhagrachari.com/media/PhotoGallery/2018November/WhatsApp-Image-2021-06-21-at-121045-PM-2106211213.jpeg)
ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপের খাগড়াছড়ি ইউনিটের অংগ্যা মারমার দাবি, সনেরঞ্জন ত্রিপুরা নামে জমিটির দলিলপত্র রয়েছে। তিনি বাগান সৃজন করে জমিটি ভোগ দখলে রয়েছেন। সম্প্রতি সেখানে সনেরঞ্জন ত্রিপুরার র্নিমাণাধীন ঘরটি ভেঙ্গে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে সেনাবাহিনী।
সরেজমিনে ঘটনার স্থলে গিয়ে দেখা জানা যায়, সনেরঞ্জন ত্রিপুরার কোন জায়গা সেখানে নেই। সনেরঞ্জন জায়গার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি। তিনি জানান, আমাকে ইউপিডিএফ জোরপূর্বক সরকারি খাস ভূমিতে বাঁশ দিয়ে ছোটখাটো একটি ঘর তুলতে বাধ্য করেন। আমি ঘরটি নির্মাণ করেছিলাম ইউপিডিএফ-এর তথাকথিত ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহযোগিতায়। ঘরটি নির্মাণ করেছি মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হবার অনেক পরে এবং কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের নির্ধারিত স্থানের পাশে। এই জায়গাটি কমিউনিটি ক্লিনিকের স্থান সেটা ঠিক। হঠাৎ জায়গাগুলোর মুল্য বেড়ে যাওয়ায় ইউপিডিএফ জায়গাগুলো দখল করার অংশ হিসেবে ঘরটি নির্মাণ করে চলতি মাসের ১২ তারিখে। আমার বর্তমান স্ত্রীর পূর্বের স্বামী জায়গাটি বন্দোবস্ত পেতে ১২-১৩ বছর পূর্বে আবেদন করেন। সে সূত্র ধরে জায়গাটি আমি আমার দাবি করছি। তবে আমি ঘর তোলার পক্ষে নয়, কারণ আমার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন কার্বারী জানান, নির্মাণাধীন নয়নাভিরাম মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি সড়কের ফলে এখানকার প্রকৃতি সেঝেছে নতুন রূপে। যার ফলে এখানে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার মত পরিবেশে সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সরকারি খাস ভূমিগুলোর প্রতি ইউপিডিএফ-এর লোভ পড়েছে। তা থেকে সন্ত্রাসীরা ছোট বাঁশের ঘর নির্মাণ করে সেটি আবার ভেঙে দিয়ে সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করে আসছে। প্রকৃত পক্ষে মূল ঘটনাটি এমন নয়। মুলত তারা সাধারণ পাহাড়িদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেই ইউপিডিএফ নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে।ইউপিডিএফ-এর এই নোংরা রাজনীতি এটা নতুন কিছু নয়।
সরকারি খাস ভূমি দখলের বিষয়ে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তুষার আহমেদ ভূমি জরিপ হয়নি বলে জানান। বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের বিরুদ্ধে অপপ্রচার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান বিষয়টি। ভূমি জরিপ না হলেও ভূমি দখল ইস্যুতে ভূমিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কর্তব্য কি প্রশাসনের নয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনি (ডিসি) স্যারের সাথে কথা বলুন তাহলে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। চলমান সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন হিসেবে ওনার দায়িত্ব-কর্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি, অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেনা সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের সহযোগিতায় করোনাকালীন সময় থেকে ওই এলাকায় বসবাসরত অসহায় পাহাড়ি জনগণের প্রস্তাবিত ওই ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা সেবা, মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও বিনামূল্যে ওষধ সরবরাহ ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দেওয়া হচ্ছে। গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অসহায় (অসুস্থ) রোগিদের এ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত ক্লিনিকের জায়গাটি সরকারী ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জায়গা। সেখানে সনে রঞ্জন ত্রিপুরার নামে কোন ব্যাক্তির প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্রের জমি নেই। ওই এলাকার মানুষদের মানবিক সহযোগিতার লক্ষে এই ক্লিনিকটি করা হচ্ছে। একটি ক্লিনিক স্থাপন ওই এলাকার সাধারন মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো। ক্লিনিক স্থাপনের জন্য একটি কমিটিও রয়েছে। সন্ত্রাসবাদী মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য ক্লিনিকটি স্থাপনে বিরোধিতা করে মিথ্যে গুজব রটিয়েছেন। তারা ক্লিনিকটির কার্যক্রম বন্ধ করে বিক্ষোভ-মিছিল করে সেনাবাহিনীকে বির্তকিত করার অপচেষ্টা করছে, যা অত্যান্ত দুঃখজনক।
সেনাবাহিনী যে জমিতে ক্লিনিকটি স্থাপন করছে সেটি খাস ও অনাবাদি জমি। পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির দোহাই দিয়ে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের সব ভূমির মালিকানা উপজাতিরা দাবি করে আসছে। প্রকৃত পক্ষে এটা হাস্যকর। খাস জমি ভোগ দখল করে আসছেন অনেকেই, কিন্তু যখন রাস্ট্রের প্রয়োজন পড়ে সে ভূমি ছেড়ে দিতে হয়।
উপর্যুক্ত বিষয়ে প্রশ্ন করলে অকপটে এমনটাই স্বীকার করেন, পনেন্দ্র ত্রিপুরার স্ত্রী চিরনদেবী ও ছেলে জনি ত্রিপুরা। ক্লিনিকের স্থানটির মালিকানা দাবি প্রসঙ্গে হিরণ ত্রিপুরা নামের একজনের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, পনেন্দ্র ত্রিপুরা পাচঁ একর জমি বন্দোবস্তি পাওয়ার আবেদন করেছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রীকে বিয়ে করে সনে রঞ্জুন ত্রিপুরা, প্রস্তাবিত ক্লিনিকের পাশেই তারা বসবাস করেন। পনেন্দ্র ত্রিপুরার আবেদন ও ভোগদখল মূলে তার স্ত্রীর দ্বিতীয় স্বামী জমিটি দাবি করছেন। প্রকৃত ভূমি মালিক কিনা তারা তার বিষয়টির আরো অধিক গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।
একটি সূত্র জানিয়ে পাহাড়ে সন্ত্রাসীরা সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করার সাহস পাচ্ছে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের অসচেতনতার ফলে। একটি সূত্র জানিয়েছেন, গত ১৪ ই জুন খাগড়াছড়ি টাউন হলে ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম, ‘ভূমি দখল, ঘর ভাংচুরের অভিযোগ তুলে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছিল’। এই কর্মসূচীর অনুমতি ও সহযোগিতা নৈপুণ্যে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা জড়িত ছিল। ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের কর্মসূচীতে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের অনেক নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। যাদের নামে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি ও অপহরণ মামলা রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের এমন অসহযোগিতামূলক আচরণ পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাতকে উস্কে দিবে বলে মনে করে উক্ত জনপদের বাসিন্দারা। এর ফলে সরকারি ভূমি হবে বেদখল।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জটিলতা যুগ যুগ ধরে চলমান থাকার পেছনে জেলা প্রশাসন ও তার কর্মকর্তা কর্মচারীরা দায়ী। তারা এখন পর্যন্ত সরকারি খাস জমি গুলো চিহ্নিত করতে পারেনি। তারা যদি সরকারি খাস ভূমি গুলো চিহ্নিত করতে পারতেন তাহলে ভূমির মালিকানা নিয়ে এতোটা জটিলতা সৃষ্টি হতো না, এবং সরকারি ভূমি সন্ত্রাসী ও তাদের দোসরা জোরপূর্বক দখল করার সুযোগ পেতেন না।
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর বিন্দুমাত্র সত্যতা পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন, এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া একটু তৎপর হলে ইউপিডিএফ-এর পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে বলে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। মূলত নান্দনিক সড়ক নির্মাণের ফলে উক্ত অঞ্চলে পর্যটকের আনাগোনা বেড়েছে। পূর্ব থেকে ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্প বিকাশের বিরোধিতা করে আসছিল। সাজেক, নীলগিরি, চিম্বুক ও আলুটিলা সবগুলো পর্যটন স্পটের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ মিছিল ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার অপচেষ্টা করেছিল ঠিক, কিন্তু তার কোনটাতেই সফল হয়নি জেএসএস (সন্তু) ও ইউপিডিএফ (প্রসিত)।
মন্তব্য বন্ধ আছে তবে ট্র্যাকব্যাক ও পিংব্যাক চালু রয়েছে।