মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ

মো.গোলামুর রহমান।।
আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, গত ১৮.০৮.২০২৫ইং তারিখে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলায় লংগদু প্রেস ক্লাবে, আমি মো: মনির হোসেন রাংগীপাড়া ১নং ওয়ার্ড, ৪নং বগাচতর ইউনিয়ন, লংগদু, রাংগামাটির একজন স্থায়ী বাসিন্দা। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, সমাত্ব বানু, পরবজান, মো: ইউনুছ, কহিনুর বেগম, নিজাম উদ্দিন একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করে বলেন, তাদের পূর্ব পূরুষদের পার্বত্য চট্টগ্রামে আসার পর থেকে ৮০/৮১ সনে সরকারের দেওয়া রেকর্ডীয় জায়গায় বসবাস করে আসছে। প্রায় ৪০/৪৫ বছর পর গত ৮. ১০.২০২৪ইং তারিখে আমাকে পার্শ্ববর্তি এলাকার বাসিন্দা উল্লেখ করে বলেন- আমি নাকি জাল-জালিয়াতি কাগজপত্র দেখিয়ে তাদের পাঁচজনের রেকর্ডীয় প্রায় ২০ একর জায়গা আমি নিজের বলে দাবী করে আসছি এবং বেশ কয়েকটি মামলা করেছি।
এ সব বিষয়ে বাধা প্রদান করলে তাদেরকে ৪০/৫০ ছেলে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র সহ মারধর করতে যাই বলে অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে তারা মামলা করেন বলে উল্লেখ করেন ।
গত ১৮.০৮.২০২৫ইং তারিখের সংবাদ সম্মেলনে যে সকল কথিত অভিযোগ তারা করেছেন তা সম্পূর্ন মিথ্যা
বানোয়াট, উদ্দেশ্যমূলক। আমি ও আমার পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে এরূপ মিথ্যা
সংবাদ সম্মেন করেছে। আমি এর প্রতিবাদ করছি।
প্রকৃত বিষয় হলো- অত্র উপজেলাধীন ২৩নং বগাচতর মৌজাস্থ ৬৫৭নং হোল্ডিং এ তিন চৌহদ্দীতে মোট ৪.৫০
(চারশত পঞ্চাশ শতক) একর জমি আমার নিজ নামে রেকর্ডভূক্ত আছে। উক্ত জমিতে আমি শান্তিপূর্ন ভোগ-দখলে আছি। পাহাড়ী অঞ্চলে হাতির অত্যাচর সহ্য করে বসবাস করে টিকে আছি । আমার জমির পাশে হলো ২৬৪নং হোল্ডিং এর মালিক মমিন মাঝি। তার রেকর্ডের পরিমান- ০.৭৫ (পচাত্তর শতক) একর। যাহার চৌহদ্দী: উ: ও দ: ছড়ার অর্ধেক, পূ: রাস্তা, প: খাস। মমিন মাঝির মৃত্যুর পর তার ছেলে ইউনুছ ও স্ত্রী পরবজান এ পর্যন্ত প্রায় ৫.০০ পাঁচ একর জায়গা বিক্রি করেছেন। তন্মধ্যে মো: আরফান আলীর নিকট ২.০০ দুই একর, আরফানের মেয়ের জামাইর নিকট ১.০০ (একশ শতক) একর, দফাদার জাকিরের নিকট ১.০০(একশ শতক) একর জায়গা বিক্রি করেছেন।
তারপরও কেন তারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করলেন এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন তা আমার বোধগম্য নয়। আমার জমির আরেক প্রতিবেশী ২৬৫ নং হোল্ডিং এর মালিক কাঞ্চন মীর। তার রেকর্ডের পরিমান ০.৫০ পঞ্চাশ শতক। এবং চৌহাদ্দী:- উ: খাস, দঃ খাস, পূ: ছড়া, প: খাস। কাঞ্চন মীরের মৃত্যুর পর তার মেয়ে পরবজান ও নাতি মো: ইউনুছ গত ১৪.৭.২০২১ইং তারিখে আমি মনির হোসেনের নিকট উল্লেখিত চৌহদ্দী মোতাবেক পরবজান ০.৫০ পঞ্চাশ শতক জায়গা বিক্রি করেন। আমি উক্ত জমি নামজারি করে দিতে বললে পরবজান নানা তালবাহানা করতে থাকেন ।
অপর আরেকজন হলো, সমত্ববানু স্বামী মৃত. মোসলেম উদ্দিন হাওলাদার। তার স্বামীর নামীয় রেকর্ডীয় ১.০০ একর জায়গা নিয়ে মহাজন পাড়ার ইকবাল হোসেন রাজুর সহিত বিরোধ দেখা দিলে সে রাজনগর বিজিবি জোন, স্থানীয় গন্যমান্য জনপ্রতিনিধির নিকট বিচার প্রার্থী হলে রাজনগর বিজিবি জোনের সহায়তায় সমাত্ববানুর জায়গায় থাকার জন্য একটি ঘর নির্মান করে দেওয়া হয় এবং জায়গাও বুজিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু সমাত্ববানু থাকেন কালাপাকুজ্জা ইউনিয়নে তিনি তার জায়গা বিক্রি করলে আমার নিকট বিক্রি করবেন মর্মে গত
১২.০৫.২০১৮ইং তারিখে চুক্তিপত্রের মাধ্যেমে ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা গ্রহন করেন। আমি উক্ত টাকা ফেরত চাইলে নানান অজুহাত দিতে থাকেন।
আপনাদের নিকট সেই দিনের সাংবাদিক সম্মেলনের ভিডিও ফুটেজ অবশ্যই রয়েছে। সেদিন সেখানে ভুক্তভোগি
হিসাবে দাবি করা কহিনুর বেগম তার বক্তব্যে স্বীকার করেছেন তার বাবা আব্দুর রব এর জমি দখল করেছিলো তার পাশে বসে থাকা নিজাম উদ্দিন। আমি তাদের জায়গা দখল করিনি। প্রকৃত দখলবাজ এবং নাটের গুরোই হলো এই নিজাম উদ্দিন। কহিনুরের বাবা আব্দুর রব এর জায়গা দখলবাজ নিজাম উদ্দিনের নিকট থেকে দখল মুক্ত করতে
আমি সহায়তা করেছিলাম। এই রাগে, ক্ষোভে নিজাম আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
সেই দিন সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে নিজামের স্বাক্ষর থাকলেও তিনি কোন বক্তব্য দেননি। তার ছেলে লিটনের কোন নাম ও স্বাক্ষর না থাকলেও পুরো সংবাদ সম্মেলনে লিটন মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করেন। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এবং আহবান করছি সাংবাদিক ভাইদের স্বরজমিনে পরিদর্শন করে কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে প্রকৃত সত্য উৎঘাটন করতে।
আমি একজন নিরীহ অসহায় ব্যক্তি। এই নিজাম আমাকে পথের ফকির বানিয়েছে । তিনি তাহার নামীয় বন্দোবস্তির
আবেদন ডকেট নং- ১৯৫৭ তারিখ: ১৩.০৩.২০০৭ইং মূলে ৫.০০(পাঁচশ শতক) একর জমি আবেদনের কপি
উপস্থাপন করেন যাহার চৌহদ্দী:- উ: বাতুমা ছড়া, দ: রাস্তা, পূ: রাস্তা, প: নন্দি কিশোরের বন্দোবস্তি জমি। এই বন্দোবস্তির আবেদন দেখিয়ে আমি মনির হোসেন ও কহিনুর তথা আব্দুর রবের জমি সহ অনেকের জমি জবর দখল,মামলা হামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছে।
নিজাম উদ্দিন ও তার ছেলে লিটনসহ আরো লোকজন আমার জায়গা জবর দখল করতে আসলে আমি বাধা দিলে তারা আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়, শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে ফলে আমি তাদের বিরুদ্ধে গত ০৯.১১.২০২২ইং তারিখে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, রাংগামাটিতে মামলা করি যাহার নাম্বার সি.আর মামলা নং- ৪১৯/২০২২। উক্ত মামলায় বিজ্ঞ আদালত, ইউ.এন.ও মহোদয় লংগদু কে স্বরজমিনে তদন্তের আদেশ দিলে, ইউ.এন.ও মহোদয় স্বরজমিনে তদন্ত করে গত ০৮.০২.২০২৩ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “ বাদী মনির হোসেনের রেকর্ডীয় কাগজপত্র রয়েছে, অন্যদিকে বিবাদীগণ জমির রেকর্ডী কোন কাগজপত্র দেখাতে পারে নাই। বাদী মনির কে বিবাদী কর্তৃক আঘাতের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়।”
উক্ত মামলা চলাকালীন সময়ে ১২.০৯.২০২২ইং তারিখে পূনরায় নিজাম, লিটন, কামাল, আলী আকবর সহ সবাই আমার জায়গা জবর দখল করতে আসলে আমি বাধা দিলে তারা আমাকে মেরে রক্তাক্ত জখম করে।
ফলে আমি থানায় মামলা করি যাহা ননজি আর মামলা নং- ০৭/২০২৩ হিসাবে বিজ্ঞ আদালতে বিচার হয়। উক্ত মামলায় বিবাদীদের ১মাস কারাদন্ড ও ৫০০টাকা জরিমানা হয়। এতো কিছুর পরেও নিজাম গং রা থেমে থাকেনি। আমার জায়গার ২নং চৌহদ্দীর কিছু জায়গা জৈনক রাজিয়া বেগম স্বামী: অছিম উদ্দিন ও মো: আলী আকবর পিতা: মো: হোসেনের দ্বারা নতুন করে বিরোধ সৃষ্টি করে দখলে নেওয়ার পায়তারা করছে।
বিষয়টি আমি অবগত হওয়ার পর ৪নং বগাচতর ইউনিয়ন গ্রাম্য আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করি, যাহা গ্রাম্য আদালত মামলা নং- ২৮/২০২৪। পরবর্তিতে চেয়ারম্যান মহোদয় ১নং ও ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার কে
স্বরজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বললে মেম্বার মহোদয়গন গত ২৩.০৯.২০২৪ইং তারিখে স্বরজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে মেম্বার মহোদয়গন উল্লেখ করেন, ‘‘বাদীর ৬৫৭নং
হোল্ডিং এ বর্নিত চৌহদ্দীতে বাদী মনিরের জমির মিল পাওয়া যায়। বাদীর ঘর-বাড়ী ও কৃষিপন্য চাষাবাদ করত: ভোগ-দখল প্রমানিত হয়।
বিবাদী নিজামের বন্দোবস্তির আবেদনকৃত কাগজপত্রের সাথে বিরোধীয় জমির কোন মিল পাওয়া যায় নাই। বিবাদী নিজাম উদ্দিন বাদী মনির হোসেন কে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে
আসছে মর্মে ¯ স্থানীয় স্বাক্ষীদের বক্তব্যে প্রকাশ পায়।”
উক্ত প্রতিবেদনের প্রাপ্তীর পর গ্রাম্য আদালত রায় প্রাদান করে বলেন, ‘‘ বিবাদী নিজামের দাবী অমূলক ও ভিত্তিহীন এবং তাহার কাগজ-পত্র বাদী মনির হোসেনের রেকর্ডীয় জমির সংলগ্ন নয়। বাদী মনির হোসেন তাহার নামীয় ও ভোগ-দখলীয় ৬৫৭নং হোল্ডিং এর জমিতে শান্তিপূর্ন ভোগ দখলে থাকবেন, বিবাদী
তাহাকে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।’’ মর্মে রায় প্রদান করেন। দখলবাজ ও ভূমি দস্যু নিজাম উদ্দিন এরপর নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করে। সে পরবজান, সমাত্ববানু, মো: ইউনুছ, ও কহিনুর বেগম কে আমার বিরুদ্ধে ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে উষ্কে দিতে থাকে এবং তাদের কে অর্থ দিয়ে ভুল বুজিয়ে আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য করে। তাদের কে প্ররোচিত করে নিজাম উদ্দিন সহ পাঁচ জন বাদী হয়ে আমার বিরুদ্ধে
বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালত, রাংগামাটিতে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার নাম্বার সিভিল মামলা নং-২৪১/২৪। উক্ত মামলার ৪নং প্যারার শেষদিকে উল্লেখ করেন ২০০০সাল থেকে বন্দোবস্তি কার্যক্রম বন্ধ অথচ ৬নং পাতায় নিজাম উদ্দিনের তফসিল বর্ণনায় উল্লেখ করেন, বন্দোবস্তি ডকেট নং ১৯৫৭ তারিখ: ১৩.০৯.২০০৭। প্রকৃত পক্ষে দেখা যায়, পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রানালয় গত ২৩.১০.২০০১ সালে সিনিয়র সহকারী সচিব মোহসিনা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চেয়ারম্যান, তিন পার্বত্য জেলাপরিষদ ও জেলা প্রশাসক,
তিন পার্বত্য জেলাকে ‘‘ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি বন্দোবস্তি প্রদান কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়।” সেই থেকে তিন পার্বত্য জেলায় বন্দোবস্তির সকল
কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, ২০০৭ সালে নিজাম উদ্দিন কিভাবে বন্দোবস্তির আবেদন করলেন?? এতেই প্রমানিত হয় নিজাম উদ্দিন যে বন্দোবস্তির আবেদন দেখিয়ে আমাকে হয়রানী করছে তা সম্পূর্ন ভুয়া ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করা। আপানাদের মাধ্যেমে নিজাম উদ্দিন গং দের অত্যাচার
নির্যাতন ও হয়রানী থেকে আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচান। তারা আমার বহু অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছে।
মামলা হামলা করেছে। এবং সামাজিক ভাবে আমাকে সম্মান হানী করার উদ্দেশ্যে পরবজান, কহিনুর বেগম, সমাত্ববানু, মো: ইউনুছ কে উষ্কানি দিয়ে গত ১৮.০৮.২০২৫ইং তারিখে একটি মিথ্যা সংবাদ সম্মেলন করেন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এর প্রতিকার কামনা করছি। আমি এহেন হীন কর্মকান্ডের বিচার চাই।