বাংলাদেশ-সৌদি আরব রোহিঙ্গা পাসপোর্ট ইস্যুতে অস্বস্তি
আলোকিত লংগদু ডেক্সঃ
বাংলাদেশ-সৌদি আরব রোহিঙ্গা পাসপোর্ট ইস্যুতে অস্বস্তি বোধ করছে দুই দেশ । সৌদি আরবে অবস্থানরত ৫৪ হাজার রোহিঙ্গা ইস্যু ঘিরে ঢাকা-রিয়াদ সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। প্রায় ৪০ বছর আগে সৌদি আরবে যাওয়া এসব রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য ঢাকাকে চাপ দিচ্ছে রিয়াদ।
তবে ঢাকার পক্ষ থেকে রিয়াদকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এসব রোহিঙ্গাদের আগে বাংলাদেশের পাসপোর্ট বা প্রমাণাদি থাকলে ইস্যু করা হবে, তা না হলে সম্ভব নয়।
সূত্র জানায়, ১৯৭৭ সালে সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশা মানবিক বিবেচনায় ৫৪ হাজার রোহিঙ্গা নিয়ে গিয়েছিলেন। সেসব রোহিঙ্গাদের কাছে এখন কোনো কাগজপত্র নেই। পাসপোর্টও নেই।
এসব রোহিঙ্গারা বাংলাভাষা জানেন না। বাংলাদেশিও নয়।
তবে এসব রোহিঙ্গাদের এখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য চাপ দিচ্ছে সৌদি আরব। এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
রোহিঙ্গারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সৌদি আরবেও বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গারা গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ১৯৭৭ সালের পরেও নানাভাবে সৌদি আরবে গিয়েছেন রোহিঙ্গারা। এসব রোহিঙ্গারা অনেকেই অসাধু উপায়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন। আবার অনেকেই দালালদের মাধ্যমে কোনো ডকুমেন্ট না নিয়েই সৌদি আরবে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন এসব রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করছে সৌদি আরব।
বাংলাদেশ-সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বৈঠক
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে বসছেন। সম্প্রতি করোনাকালে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একাধিকবার টেলিফোন আলাপ হয়েছে। তবে কোনোবারই তাদের আলাপে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইস্যুর বিষয়টি ওঠেনি। তবে ২৭ সেপ্টেম্বর এ বিষয়টি আলোচনায় উঠতে পারে।
পাসপোর্ট ইস্যুতে হার্ডলাইনে ঢাকা
সম্প্রতি বাংলাদেশে অবস্থানরত সৌদি প্রবাসীদের ফিরে যাওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। অনেকের ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আবার অনেকেই প্লেনের টিকিট না পেয়ে সেদেশে ফিরতে পারছিলেন না। এ নিয়ে সৌদি প্রবাসীরা ঢাকায় কয়েকদিন বিক্ষোভও করেন। তবে ঢাকা-রিয়াদের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হলেও রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইস্যুর সমাধান হয়নি। এই সমস্যার কীভাবে সমাধান হবে সেটা এখনই কেউ বলতে পারছেন না। তবে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইস্যুতে রিয়াদের পক্ষ থেকে চাপ দিলেও এ নিয়ে হার্ডলাইনে রয়েছে ঢাকা।
সৌদিতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা
সৌদি আরবে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। সে কারণে সৌদি সরকারের গুডবুকে তারা এখন নেই। সৌদি আরবের বিভিন্ন কারাগারে ৪৬২ জন রোহিঙ্গা আটক রয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের আগেভাগে ফেরাতে চায় সৌদি আরব। কারাগারে থাকা এসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে সৌদি আরব। তবে রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এসব রোহিঙ্গাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, এদের মধ্যে প্রায় ৮০ জনের কাছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট রয়েছে। বাকিদের কাছে কোনো পাসপোর্ট বা ডকুমেন্ট নেই।
রোহিঙ্গা বনাম কর্মী ফেরত
সৌদি আরব থেকে ৫৪ হাজার রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট না দিলে, তাদের ফেরত না আনলে সে দেশে থাকা বাংলাদেশের ২২ লাখ কর্মীকে ফেরত পাঠানো হতে পারে, এমন প্রচারণা শুরু হয়েছে। তবে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, সব দেশেই কিছু দুষ্টু প্রকৃতির লোকজন আছেন, তারাই এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটা ঠিক নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইস্যু নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সৌদিতে থাকা কোনো রোহিঙ্গার যদি আগে বাংলাদেশের পাসপোর্ট বা প্রমাণাদি থেকে থাকে তাহলেই সেটা পুনরায় ইস্যু করা হবে। তবে যাদের কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই, প্রমাণাদি নাই তাদের সেটা পুনরায় ইস্যু করা হবে না।
তিনি আরো বলেন, সৌদি আরবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা কোনো রাষ্ট্রহীন লোক রাখে না। তাই রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট থাকা প্রয়োজন। তবে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইস্যু করা মানেই তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নয় বলেও জানিয়েছে সৌদি আরব।