পাহাড়ে বাড়ছে উপজাতি কর্তৃক ধর্ষণ: শিক্ষিকা ধর্ষণের অভিযোগে ত্রিপুরা যুবক আটক।

ডেস্ক রিপোর্টঃ

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বজাতি কর্তৃক নারী ধর্ষণের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সাম্প্রতিক তিনটি ঘটনায় পাহাড়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় এক চাকমা নারী শিক্ষিকা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) পানছড়ি উপজেলার এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (২৯) সহকারী শিক্ষিকা বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে বন্ধুকে নিয়ে সন্ধ্যায় আলুটিলা পর্যাটন কেন্দ্র তারেং চুমুই এলাকায় ঘুরতে গেলে রাত ৮টায় লিটন ত্রিপুরা নামে এক মোটরসাইকেল চালকের হাতে ধর্ষণের শিকার হন।

এ ঘটনায় গতকাল রাতেই ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মাটিরাঙা থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।

‎মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে স্কুলশিক্ষিকা তার বন্ধুকে নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা শহরে থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে আলুটিলা বেড়াতে যায়। এ সময় লিটন ত্রিপুরা তাদেরকে অনুসরণ করেন। আলুটিলায় তারেং এলাকায় পৌঁছানোর পর মোটরসাইকেল চালক লিটন তাদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ওই শিক্ষিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ভুক্তভোগীর বন্ধু স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে খবর দিলে সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা লিটন ত্রিপুরাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। আটক লিটন ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার মহালছড়ার বাচ্চু রাম ত্রিপুরার ছেলে।

এর আগে ২০ অক্টোবর রাতে মাটিরাঙা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের অযোদ্ধা এলাকায় এক কিশোরী ৪ ত্রিপুরা যুবকের হাতে গণধর্ষণের শিকার হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিশোরীটি আত্মীয়ের সঙ্গে অযোদ্ধা কালি মন্দিরে পূজা দেখতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে চার যুবক তাকে কথা বলার ছলে ডেকে নিয়ে একান্ত স্থানে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

অন্যদিকে, গত ১৭ অক্টোবর রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম চংড়াছড়ি মুখ এলাকায় এক প্রতিবন্ধী নারীকে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা করার অভিযোগে স্বজাতি ৩ মারমা যুবকের বিরুদ্ধে প্রথাগত বিচার বসানো হয়। সেখানে অভিযুক্তদের শুকর জরিমানা করা হলেও ভুক্তভোগী নারীকে উল্টো ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়—যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মানবাধিকার কর্মী ও সচেতন মহল মনে করছেন, সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় পার্বত্য এলাকায় উপজাতি সংগঠনগুলোর দ্বিচারিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা অভিযোগ করছেন, উপজাতি নারী কোনোভাবে বাঙালি কর্তৃক ধর্ষণ কিংবা যৌন নির্যাতনের শিকার হলে সংগঠনগুলো ব্যাপক আন্দোলন-অবরোধ ও প্রচারণা চালায়। কিন্তু স্বজাতি পুরুষের হাতে নারী ধর্ষিত হলেও তারা নীরব থাকে বা প্রথাগত বিচারের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় একজন বিশ্লেষক বলেন, “প্রথাগত বিচারের নামে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে।”

এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সিঙ্গিনালা এলাকায় এক মারমা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ইউপিডিএফ বাঙালি ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন ও অবরোধ করে। কিন্তু পরবর্তীতে মেডিকেল পরীক্ষায় প্রমাণ হয়, কোনো ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি।

স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতন এখন শুধুমাত্র সামাজিক সমস্যা নয়, বরং এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজাতি সংগঠনগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে কখনো প্রচার করছে, কখনো গোপন করছে—যা নারী নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সচেতন মহল বলছে, পার্বত্য অঞ্চলে ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতার প্রতিটি ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং উপজাতি-বাঙালি ভেদাভেদ না করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় পাহাড়ে নারী নির্যাতনের সংস্কৃতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

মন্তব্য বন্ধ আছে