কাউখালীতে বিএনপির ৪ নেতাকর্মী বহিস্কার; মারামারিসহ মাস্তানির অভিযোগ!
ডেস্ক রিপোর্টঃ
দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত না মেনে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাঙামাটির কাউখালীতে এবার দল থেকে চারজনকে বহিস্কারসহ দলীয় পদ-পদবি স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার রাতে কাউখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব মেম্বার কর্তৃক স্বাক্ষরিত দুই পত্রের মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির বহিস্কারাদেশে উল্লেখ করা হয়, দলীয় পদ পরিচয় ব্যবহার করে আপনি জিয়া উদ্দিন বাবলু, পিতা: মনির উদ্দিন, সাং-রাঙ্গীপাড়া ও মোঃ রুবেল,পিতা-মৃত: জসিম উদ্দিন, সাং-বেতছড়ি, কাউখালী উপজেলা।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের নেতৃত্ব অমান্য এবং নিজ স্বার্থে এলাকায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দলীয় ইমেজ ক্ষুন্ন করায় রাঙামাটি জেলা বিএনপির নির্দেশে গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা মোতাবেক অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে আপনাদেরকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ সহ দলের সকল পর্যায়ের/সংগঠনের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান পূর্বক সাময়িক বহিস্কার করা হইলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলেও উক্ত বহিস্কারাদেশ পত্রে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও আরেকটি পত্রের মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়, ঘাগড়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক সেলিম ও ঘাগড়া ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য মোঃ তৈয়ব আলীর নামোল্লেখ করে জানানো হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের নেতৃত্ব অমান্য এবং এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে দলীয় ইমেজ ক্ষুন্ন করায় রাঙামাটি জেলা বিএনপির নির্দেশে আপনাদের দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন কাউখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব মেম্বার।
এদিকে জানাগেছে, গত ৩১শে জানুয়ারী কাউখালী উপজেলাধীন বেতছড়ি ছিদ্দিক-ই আকবর মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত সমাজ পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে জনৈক দিন মজুর রুবেল ভোট দিতে গেলে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দেয়ার আশঙ্কা করে রুবেলকে বেদড়ক পেঠাতে থাকে যুবদল নেতা সেলিম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
গুরুত্বর আহত রুবেলকে উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রিগ্যান ও মোঃ জলিল উদ্দিন। এসময় সেলিম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা সোহেল রিগ্যান, জলিল ও রুবেলকে দ্বিতীয় দফায় পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে রেখে যায়।
এই ঘটনাটি জানতে পেরে স্থানীয় পুলিশ ও সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করে। কিন্তু সেখানেও হামলাকারিদের অব্যাহত হুমকিতে তারা সুচিকিৎসা নিতে না পেরে কাউখালী থানায় অভিযোগ দিতে যাওয়ার সময় বিএনপি নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলুর নেতৃত্বে পুনরায় হামলা চালিয়ে সোহেল রিগ্যানকে রক্তাক্ত করে মামলা করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আহত সোহেল রিগ্যান।
এই বিষয়টি রাঙামাটি জেলা বিএনপির নজরে আসলে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে কাউখালী উপজেলা বিএনপিকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এদিকে, উপজেলা বিএনপির একটি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, বহিস্কৃত ইউনিয়ন বিএনপির নেতা সেলিম বিগত স্বৈরাচারি সরকারের পতনের দিন ৫ই আগষ্ট সন্ধ্যায় কাউখালী-রানীরহাট সড়কের পাইনবাগান এলাকায় তার সঙ্গীয় পান্ডাদের সাথে নিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে আশা এনজিও’র ম্যানেজার কর্তৃক চালিত একটি মোটর সাইকেল আটক করে। এসময় ম্যানেজারের পেছনে তারই সহকর্মী(কিস্তি আদায়কারি)এক নারী বসা ছিলো।
এই দুইজনকে আটকিয়ে জোরপূর্বক ভিডিও ধারণ করে সেটি ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে একলক্ষ টাকা নিয়েছে বলে জানাগেছে। মেয়েটির একটি অডিও ক্লিপও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এরআগেও সেলিমের বিরুদ্ধে নারীদের ইভটিজিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো কাজও একাধিকবার করেছে বলে সংগঠনের সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া ও গত ১৭শে আগষ্ট ২০২৪ তারিখে কাউখালী উপজেলা সদরের মিনি মার্কেট থেকে একটি বালু তোলার মেশিন গভীর রাতে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সেলিমের বিরুদ্ধে।