উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতার দ্বন্দে উত্তপ্ত লংগদু
আলোকিত লংগদু ডেস্ক রিপোর্টঃ
রাঙামাটির লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকারের বিরুদ্ধে এবার স্থানীয় এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকে পেটানোর অভিযোগ ওঠেছে।
সোমবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে লংগদু উপজেলা পরিষদ মাঠের সামনে বেল্লালকে মারধরের ঘটনায় সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বারেক সরকারের শাস্তি দাবি করেছে লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা। আহত মাইনীমুখ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বেল্লাল হোসেনকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘হাজাছড়ার একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ কর্মী আমাকে জিজ্ঞাস করেন তাকে কেন কমিটিকে রাখা হয়নি। তখন আমি তাকে জানিয়েছিলাম উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে নিষেধ করেছেন। সে এই কথাটি আবার চেয়ারম্যানকে জানায়। পরবর্তীতে (সোমবার) সকালে চেয়ারম্যান কোনো কথাবার্তা না শুনেই আমাকে হাত দিয়ে কিল ঘুষি মারে, পরে তার পায়ের জুতা দিয়ে মারতে থাকে। এই অবস্থায় আশে-পাশের লোকজন আমাকে রক্ষা করে।
এদিকে, মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল বারেক সরকার বলেন, ‘দলীয় কর্মীকে আমি বাদ দেওয়ার কথা বলেছি এটি মিথ্যা অভিযোগ। আমি এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বে নেই, সেখানে আমি এ কথাটি বলি কিভাবে। এ বিষয়টি জিজ্ঞেস করতে গেলে বেলাল আমার সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলে। পরে আমি তাকে দুটি থাপ্পড় দিয়েছি। বারেক সরকারের অভিযোগ, হামলার সময় বেল্লাল হোসেনের সঙ্গে থাকা লোকজন তার প্রায় ৩লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তবে আওয়ামী লীগ নেতা বেল্লালকে মারধরের ঘটনা বারেক সরকারের ‘পূর্ব পরিকল্পনা’ ছিল বলেই ইঙ্গিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু।
বাবুল দাশ বাবু জানান, সকালেই বারেক সরকার আমাকে জিজ্ঞেস করে বেল্লাল কোথায় আছে। এরপর দুপুরে বেল্লালকে মারধর করা হয়েছে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনে অবস্থান নেওয়ায় সভা-সমাবেশে তার বিরুদ্ধে কথা বলাতেই বারেক সরকার ক্ষেপেছেন। এবার আমাদের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে মারধর করছেন।টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বারেক সরকার নিজেই বেল্লালকে মারধর করতে গেছেন। মারধর করতে গেলে কেউ কি সঙ্গে টাকা নিয়ে যাবেন? এটা তার বানোয়াট অভিযোগ।
এদিকে, দুপুরে ইউপি আওয়ামী লীগ নেতাকে হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে আওয়ামী লীগ। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় হতে বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি দলীয় কার্যালয়ে ফের এসে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সভা করেন নেতারা। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সুভাষ চন্দ্র দাশ, সহ-সভাপতি আব্দুল আলী ও হোসেন আলী, জেলা পরিষদ সদস্য আসমা বেগমসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
সভা থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা হামলাকারীকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। অন্যদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাত ৭টায় মাইনীমূখ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকারের সমর্থকরা। প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, বারেক সরকারের সুনাম ও জনপ্রিয়তা ক্ষুন্ন করতে পূর্ব থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছে একটা কুচক্রী মহল। তারই প্রেক্ষিতে গতকাল হেয় প্রতিপন্ন করে এবং উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে এধরনের একটা ঘোলাটে পরিবেশ তৈরি করেছে তারা।
এ ঘটনার পর থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভ্রাট সৃষ্টি হওয়ার ফলে লংগদুতে উত্তাপ বিরাজমান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লংগদু থানার অফিসার ইনচার্জ ইকবাল উদ্দিন জানান, গতকালের মারামারির বিষয়টা নিয়ে আমরা অবগত আছি। দুই পক্ষ থেকেই লিখিত অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রসঙ্গত, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে তৎকালীন লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল বারেক সরকারকে দলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
মন্তব্য বন্ধ আছে তবে ট্র্যাকব্যাক ও পিংব্যাক চালু রয়েছে।