ঈদে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
আলোকিত লংগদু ডেক্সঃ
ঈদে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাড়ি ফেরার প্রেক্ষাপটে সারাদেশ আবারও সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকিতে পড়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, ঈদকে কেন্দ্র করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মানুষের যাতায়াত ঠেকাতে তারা নিরুপায়।ফলে এখন সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি মাথায় রেখে ঈদের পর পরই নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন।
সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করেই সড়ক এবং নৌপথে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে।
ঈদের আগের দিনে মানুষের স্রোত দেখা যায় বাসটার্মিনাল, লঞ্চ এবং ফেরীঘাটগুলোতে।
ঢাকার সাথে উত্তরের জেলাগুলোর যোগাযোগের সহাসড়কে টাঙ্গাইল জেলায় কয়েক কিলোলোমিটার জুড়ে যানজটে মানুষকে ভোগান্তিও পোহাতে হয়।
দক্ষিণাঞ্চলমুখী সব লঞ্চে মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের খবর পাওয়া যায়।
স্বাভাবিক সময়ে ঈদে বাড়ি ফেরার যে দৃশ্য থাকে, এখন মহামারির মধ্যেও পথে পথে অনেকটা একই চেহারা নেয়।একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট গেছেন। তিনি বলছিলেন, রাস্তায় মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য বিধি মানার কোন বালাই নেই।
“আমি আজকে গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত এসেছি। রাস্তাঘাটে দেখলাম, ৫০ শতাংশ মাস্ক পরেছে, আর বাকিটা পরেনি। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে যে গাড়িগুলো আসছে, সেগুলোতে যে স্বাস্থ্যবিধির কথা আমরা বলি, সেটি মানা হচ্ছে না। মানুষ মনে করছে, এটা তেমন কিছু এখন হবে না। ভাল হয়ে গেছে।”
নৌপথে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়
ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম-এই চারটি নগরীতে সংক্রমণের হার অনেক বেশি ছিল। সেজন্য এই শহরগুলো থেকে ঈদে অন্য এলাকায় না যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার।
কিন্তু নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত বৃহস্পতিবার ঈদে মানুষের বাড়ি ফেরা এবং সারাদেশে কোরবানির পশুর হাটের কারণে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো: খুরশিদ আলম বলেছেন, ঘরমুখো মানুষের স্রোত ঠেকানো কঠিন।
“শুধুমাত্র মাস্কটাও যদি আমরা ঠিকমত ব্যবহার করতে পারি, সেটাও আমাদের অনেকখানি কাজ দেবে। যেহেতু মানুষ যাওয়া এবং মানুষের স্রোত আমরা ঠেকাতে পারছি না। মানুষতো যাচ্ছে। জোর করেতো মানুষকে আটকে রাখা যাচ্ছে না।”
ঈদে কোরবানীর পশুর হাটগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
ঈদে কোরবানীর পশুর হাটগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন, গত ঈদে লকডাউনের মধ্যে সরকারের নানা ধরণের নিষেধাজ্ঞার পরও মানুষের গ্রামে যাওয়া ঠেকানো যায়নি। এবার সরকার মানুষের ওপরই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে বলে তারা মনে করেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: মাহফুজা রিফাত বলছিলেন, হটস্পট থেকে গ্রামে গিয়ে অন্যকে ঝুঁকিতে ফেলার ব্যাপারে মানুষের নিজেরও দায়িত্ব অনেক বেশি রয়েছে।
“হয়তো যাতায়াতটা আমরা বন্ধ করতে পারতাম। সেটা কার্যকরভাবে করা হয়নি। আর দ্বিতীয়ত মানুষেরও সচেতনতার দিকে যথেষ্ট করার আছে। সেখানেও দায়িত্ব হলো আমরা তাদের কতটা সচেতন করতে পেরেছি। আর মানুষের নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। কারণ সে হয়তো নিজে ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু সে তার কাছের মানুষটাকে আক্রান্ত করতে পারে এবং মৃত্যুও হতে পারে।”
ঢাকা থেকে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে গেছেন তানজিলা হক। এখনকার মহামারির মধ্যে তিনি নিজের দায়িত্বের বিষয়টা স্বীকার করেন। একইসাথে তার বক্তব্য হচ্ছে, এবার ঈদে বাধ্য হয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি গেছেন।
“এটা আসলে যার যার জায়গায় থাকাটাই নিরাপদ ছিল। কিন্তু প্রত্যেকেই প্রয়োজনেইতো মুভ করছে, সেটা হয়তো পরিবারের প্রয়োজনে অথবা আশে পাশের নানা জনের প্রতি কর্তব্য বা দায়িত্বের প্রয়োজনে।”
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত ঈদে নানা বিধিনিষেধের পরও মানুষের যাতায়াত যে ঠেকানো যায় নি, তার প্রভাব ছিল জুলাই মাস জুড়ে। এই পুরো মাসেই সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী ছিল।
তারা উল্লেখ করেছেন, গত ঈদে মানুষের যাতায়াতের প্রভাবে দেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো: খুরশিদ আলম বলেছেন, ঈদের পর সংক্রমণ কোন দিকে মোড় নেয়, সেটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হবে। এছাড়া পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
এখন দেশে ৮২টি ল্যাবে আরটিপিসিআর মেশিনের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ঈদের পর আরটিপিসিআর মেশিনের সংখ্যা বাড়িয়ে সব জেলা শহর থেকে নমুনা পরীক্ষার পদক্ষেপ তারা নিয়েছেন।
মহাপরিচালক অধ্যাপক আলম আরও বলেছেন, পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে মানুষকে আগ্রহী করার জন্যও তারা কর্মসূচি নেবেন।
একইসাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, “এখন সংক্রমণের হার ডিকলাইন বলবো না, বলবো একটা স্থির পর্যায়ে আছে। হয়তো সামনে দিকে ডিকলাইন করবে।”
কিন্তু কিছুদিন ধরে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা যে অনেক কমে গেছে, সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেছেন, ঈদের পরে আবারও ২০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষার টার্গেট তারা নিয়েছেন।