শত প্রতিকূলতাও দমাতে পারেনি লংগদু’র পারভীনকে- চান্স পেলেন মেডিকেলে

২৫৯

ডেস্ক রিপোর্টঃ

পার্বত্যাঞ্চলের দূর্গম জনপথ লংগদু। সেখানেই বেড়ে উঠা এই অদম্য শিক্ষার্থীর। ছোটবেলা থেকেই মেধার অন্যন্য নজির রেখেছে বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষা ও প্রতিযোগিতায়। শত বাঁধাবিপত্তি, আর্থিক অনটন ও গ্রাম্য কুসংস্কার ডিঙিয়ে আপন ঠিকানায় ছুটে চলেছিলো নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সাদামাটা মেয়ে। বলছি রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের চাইল্যাতলী এলাকার মো. সাহেব আলীর ছোট মেয়ে পারভীন আক্তারের কথা।

 

আট ভাই-বোনের মধ্যে পারভীন সবার ছোট বোন। তার ছোট এক ভাই রয়েছে। সবার বড় তিন বোন অর্থাভাবে পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারেনি। তারা এখন সংসারজীবন পার করছেন। অন্যদিকে পরবর্তী বড় তিনবোন রাঙামাটি সরকারি কলেজে একজন মাস্টার্স, অন্য দুইজন অনার্স পড়ছে। ছোট ভাই শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছেন। এলাকায় ছোট্ট টিনের ঘর ছাড়া তাদের আর তেমন কিছু নেই। তবুও মনকে কখনো ছোট করেনি, প্রতিকূলতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নওগাঁ মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে পারভীন আক্তার। সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ১০৪৮৩তম স্থান অর্জন করেন।

 

এ বিষয়ে পারভীনের বাবা মো. সাহেব আলী জানান, সামন্য ব্যাটালিয়েন চাকরি করে সংসার ও সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য। তবুও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেষ্টা করছেন। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও আমার ছোট মেয়ে সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে এটাই আমাদের বড় পাওয়া।

 

আবেগ আপ্লুত কন্ঠে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আল মামুন ইবনে মিজান বলেন, পারভীন খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। সে নিজের মেধা ও প্রজ্ঞায় মেডিকেলে পড়ার চান্স পেয়েছে। সে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীর মধ্যে শান্তশিষ্ট ও শিক্ষকদের অনুগত ছাত্রী ছিলেন।

 

আমি ওরে স্কুলের ‘বালা মাইয়্যা’ বলে ডাকতাম। সেই বালা মাইয়্যাই আজকে আমাদের মূখ উজ্জ্বল করেছে। পারভীন এই দূর্গম অঞ্চল থেকে প্রথম মেয়ে যে সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আশা করি ওর এই দৃষ্টান্ত অনুকরণ করে সামনে আরও অনেকে ভালো অবস্থান করে নিবে। পারভীন রাবেতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেছে। সে মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়ে মেধার অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সে লংগদু তথা আমাদের গর্ব। উপজেলায় সে অন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা তার ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করছি।

 

পারভীন আক্তার বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। এই ইচ্ছা শক্তিই আমাকে এ সফলতা এনে দিয়েছে। শিক্ষা জীবন জুড়েই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে লেখাপড়া চালিয়েছি। নিজ প্রচেষ্টায় সব বাঁধা জয় করে এখন মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করে নিজ অঞ্চলে গরীব দুঃখি মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকবো।

লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকিব ওসমান বলেন, পারভীন আক্তার হচ্ছে সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের মডেল, আইকন ও অনুপ্রেরণা। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় পারভীনকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এছাড়াও তার মেডিকেলে পড়তে সবসময় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা থাকবে। তিনি পারভীনের ভবিষ্যৎ জীবনের উজ্জ্বলতা কামনা করেন।

মন্তব্য বন্ধ আছে তবে ট্র্যাকব্যাক ও পিংব্যাক চালু রয়েছে।