লংগদুতে মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে পরিত্রাণ চায় এলাকাবাসী

১৮৭

রাঙামাটির লংগদু উপজেলা মাদকের বিষাক্ত ছোবলে ক্ষত বিক্ষত। কিশোর, তরুণ, যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ নেশায় আসক্ত।

সর্বনাশা মাদক এখন লংগদু উপজেলা সদরসহ সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বগ্রাসী নেশার ছোবলে উপজেলার হাজার হাজার তরুন ও যুব সমাজ বিপথগামী হয়ে পড়ছে। নেশা এখন শুধুমাত্র তরুণ ও যুব সমাজে সীমাবদ্ধ নয়; নেশার সাথে এখন কিশোররাও পরিচিত হয়ে গেছে। মাদকের এ বিষাক্ত ছোবল থেকে বাঁচতে চায় উপজেলার নিরীহ মানুষ। কিছু পেশাদার মাদক কারবারির হাতে এলাকার যুবক ও কিশোররা দিন দিন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান।

 

উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশার উপকরন, এতে উৎকন্ঠিত অভিভাবকগণ। তাদের চিন্তা কখন যেন নেশার জালে আটকা পড়ে যায় তার প্রিয় সন্তানটি।

 

উপজেলার সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক অভিভাবকরা বলেন- বিকেল বেলার পর থেকেই নেশার জন্য ছুটাছুটি শুরু হয়ে যায়, সন্ধ্যার পর বিভিন্ন জায়গায় নেশার আড্ডা জমে ওঠে। এতে তরুণ ও যুবকরা যুক্ত থাকায় তাদের কিছু বলার সাহস হয়ে ওঠে না। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মাঝে মাঝে ধর-পাকরাও করলেও আসামী থানা পর্যন্ত যাওয়ার আগেই অধিকাংশ সময় সব মিটমাট হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে পুলিশ মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীদের দুই চারজনকে ধরলেও মূল হোতারা থেকে যায় ধরা ছোয়ার বাইবে।

 

তারা আরো বলেন, আমরা মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে আমাদের কোমলমতি শিশুসহ যুবসমাজকে বাঁচাতে চাই। এর প্রতিকারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ চাই। লংগদুতে নেশার পাশাপাশি জুয়ারির সংখ্যাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। জুয়া খেলার মোহে এখন তরুণ, যুবক ও কিশোরও পড়েছে। মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান গুলোতে টিভিতে ক্রিকেট অথবা ফুটবল খেলা যাই হো না কেন বাজী ধরাই এখন তাদের নেশা হয়ে পড়েছে।

 

এবিষয়ে লংগদু উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু জানান, পূর্বের তুলনায় উপজেলায় এখন অনেকটাই মাদকের ছড়াছড়ি দেখা দিচ্ছে। তাই আমরা উপজেলার যুবক ও কিশোরকে মাদক ও সামাজিক অপকর্ম থেকে রক্ষার জন্য বছরের বিভিন্ন সময়ে খেলাধুলার আয়োজন করে থাকি। তারা যেন মাদকাসক্ত না হয়ে কোনো অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত না হয় সেই বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। ইতোমধ্যে লংগদু উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে ইন্টার স্কুল বিশেষ করে ৯ম-১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ৬ মাস ব্যাপী উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন খেলার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি এবং যুবকদের জন্য ব্যায়ামাগার করার প্রচেষ্টা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনে বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের চেষ্টা করবো, তবুও আমরা চাই কিশোর-যুবকরা মাদক থেকে বেরিয়ে এসে দেশ ও জাতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সুষ্ঠু সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করুক।

 

এ ব্যাপারে লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা মোহাম্মদ আরিফুল আমিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, লংগদু থানা পুলিশ একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়ারীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। গত ১০ আগস্ট দু’জনকে, ২২ আগস্ট দুই যুবককে এবং ২৯ আগস্ট উপজেলার দুইজন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন আমাদের পুলিশ টিম টহল কার্যক্রমে অব্যাহত আছে। এবং নিয়মিত বিট পুলিশিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখে উপজেলার দুর্গম এলাকা গুলোসহ বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতন, মাদকাসক্ত ও মাদক কারবারিদের সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করছি। আমাদের সাথে যদি স্থানীয়রাও তৎপর ও সচেতন হয় তবে এলাকা থেকে মাদক ও জুয়া নির্মূল করা সম্ভব হবে। তবে আমরা উপজেলায় কোনো প্রকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণকারী বা কারবারিদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দিবো না। মাদকের বিরুদ্ধে লংগদু পুলিশ “জিরো টলারেন্স” থাকবে।

মন্তব্য বন্ধ আছে তবে ট্র্যাকব্যাক ও পিংব্যাক চালু রয়েছে।